শিক্ষা সফর রচনা | ১০০০ শব্দ + | বাংলা প্রবন্ধ সম্ভার

শিক্ষা সফর রচনা লেখা লিখবো আজ। আমরা এই রচনাটি আপনাদের ধারণা দেবার জন্য নমুনা হিসেবে লিখছি। আপনি এটা পড়ে ধারণা নেবেন। তবে এটি মুখস্থ করে লিখবেন না। রচনা মুখস্থ লিখলে আপনার রচনা লেখার দক্ষতা বাড়বে না। এই নমুনাটি দেখে আপনি নিজের মতো করে লিখবেন।

শিক্ষা সফর রচনা | ১০০০ শব্দ + | বাংলা প্রবন্ধ সম্ভার

শিক্ষা সফর রচনা

ভূমিকা :

শিক্ষা অর্জন একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া প্রধানত দ্বিমুখী। এক. ব্যক্তিগত বা তত্ত্বগত জ্ঞান; দুই. জ্ঞানের বাস্তব বা প্রয়োগিক উপলব্ধি । শ্রেণীকক্ষের সীমিত পরিসরে বইয়ে লিপিবদ্ধ পাঠ-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করে জীবন ও জগতের নানাবিধ বিষয় সম্পর্কে একটা ধারণাগত শিক্ষা। আর এ ধারণাগত শিক্ষাকে ফলপ্রসূ করে তোলার জন্য প্রয়োজন হয় প্রত্যক্ষ বা বাস্তব অভিজ্ঞতা। কিন্তু শ্রেণীকক্ষের সীমিত পরিসরে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব নয়। তাই ছুটে যেতে হয় বাস্তব অঙ্গনে প্রকৃতির সান্নিধ্যে।

ভূগোল বা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়, কল-কারখানায়, অফিস-আদালতে । প্রতিটি বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান লাভের সুযোগ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় থাকে না। তাই বাস্তব শিক্ষার রীতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দরকার হয় শিক্ষাসফরের। এই শিক্ষাসফরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, যা তাদের শ্রেণীকক্ষের সীমিত পরিসরে পঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অর্জিত ধারণাগত শিক্ষাকে করে সমৃদ্ধ, এমনকি সম্প্রসারিতও। এভাবে ধারণাগত শিক্ষা ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষার নিবিড় সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা অর্জনের অভিপ্রায় থেকেই শিক্ষাসফরের উৎপত্তি এবং এখানেই নিহিত রয়েছে এর গুরুত্ব।

শিক্ষা সফর | শিক্ষাবিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার

 

শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্য :

শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্য সকল ক্ষেত্রে সমান নয়। যেমন, কারো দেশ দেখার উদ্দেশ্য থাকে, কারো থাকে নতুন সম্পদ সংগ্রহের আকাঙ্ক্ষা; কারো জ্ঞানার্জন, কারো অচেনাকে চেনার দুর্বার অভিলাষ । এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়। কারণ হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণই প্রকৃত শিক্ষা।

শিক্ষাসফর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সহমর্মিতা ও ভাবের আদান-প্রদান ঘটায়। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সহায়ক হয় এবং তাদের মন-মানসিকতা উদার হয়। ছাত্ররা জাতির মেরুদণ্ড, ছাত্রদের সুশিক্ষা দানের মধ্যে রয়েছে দেশ গড়ার কার্যকারিতা। কোনো শিক্ষকের নেতৃত্বে যখন ছাত্ররা শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে তখন তাদের সামাজিক কুসংস্কার ও সংকীর্ণতা দূর হয়। তারা নব উদ্যমে সামাজিক বাধা ও প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রম করতে সচেষ্ট হয়।

সফরের সাথে শিক্ষার সম্পর্ক :

সফর শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। জীবনের সাথে শিক্ষার সম্পর্ক যেমন নিবিড়, শিক্ষার সাথে সফরের সম্পর্কও তেমনি নিবিড়। শিক্ষা’সফর একাডেমিক প্রয়োজনও মিটিয়ে থাকে। ইতিহাস, ভূগোল ও প্রত্নতত্ত্বের ছাত্র ও জিজ্ঞাসু ব্যক্তিগণ নব নব শিক্ষা গ্রহণ ও জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষায় শিক্ষা’সফরে যান। তারা দেশ-বিদেশের ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও দ্রষ্টব্য বস্তুগুলো  দেখতে বের হন । শিক্ষাসফর ইতিহাস প্রসিদ্ধ জায়গাগুলো পরিদর্শন করার সুযোগ সৃষ্টি করে এবং স্থান ও বন্ধুগুলোর পর্যবেক্ষণ দ্বারা পুঁথিগত বিদ্যার পূর্ণতা ঘটায়।

ছাত্ররা বই পুস্তক পাঠ করে দেশ-বিদেশের ইতিহাস, প্রসিদ্ধ স্থান ও বস্তুসমূহ সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারে। কিন্তু চাক্ষুষ দর্শনে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ হয় অনেক বেশি। বই পুস্তক পড়ে কোনো একটি স্থান, বস্তু বা বিষয়ের জ্ঞানার্জন সম্পূর্ণ হতে পারে না বলেই শিক্ষানিকেতনের কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ছাত্রদের শিক্ষা’সফরের ব্যবস্থা করেন। সুতরাং শিক্ষা’সফর শিক্ষা গ্রহণের একটি প্রয়োজনীয় অঙ্গ।

শিক্ষাসফর বনাম দেশভ্রমণ :

শ্রেণীকক্ষের শিক্ষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য যে শিক্ষা’সফর তার সাথে দেশভ্রমণের কিছুটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষা’সফরের মূলে কাজ করে বিশেষ শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য, আনন্দ সেখানে প্রধান নয়। দেশভ্রমণে আনন্দটাই মুখ্য। শিক্ষা না মিললে ক্ষতি নেই, মিললে তো উপরি পাওনা।

কাপ্তাই যাওয়ার পথে সাধারণ দর্শকের কর্ণফুলি কাগজের কল দেখা আর শিক্ষা’সফরে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সেটা দেখা উদ্দেশ্য ও ফলাফলের দিক থেকে একরকম হয় না। বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা সেখানে গিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া, রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান পায়। বাণিজ্যের ছাত্রছাত্রীরা কারখানার ব্যবস্থাপনা, কাগজ বিপণন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে।

সোনারগাওয়ে শিক্ষা’সফরে গিয়ে সেখানকার ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখলে মানবিক জ্ঞান লাভ করতে পারে। সোনারগাঁওয়ে শিক্ষা’সফরে গিয়ে সেখানকার ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখলে মানবিক বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের চোখের সামনে ইতিহাসের পাতা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। নিছক বেড়ানো ও সৌন্দর্য উপভোগের চেয়ে অতীত ইতিহাসের রোমাঞ্চে আপ্লুত হওয়াই প্রধান হয়ে ওঠে। সে সাথে মনে রাখতে হবে, শিক্ষা’সফর ভবঘুরে মানুষের নিরুদ্দেশ যাত্রা বা ভ্রমণ বিলাসিতা নয়, তা শিক্ষা সহায়ক কর্মতৎপরতারই অঙ্গ।

শিক্ষাসফরের প্রত্যক্ষ গুরুত্ব :

শিক্ষা’সফর নানাভাবে জ্ঞানের জগৎকে সম্প্রসারিত ও সমৃদ্ধ করে থাকে। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা’সফরে গিয়ে তাদের অধীত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারে। শ্রেণীকক্ষে অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তবের সাথে মিলিয়ে যাচাই করে নিতে পারে। এর ফলে শ্রেণীকক্ষে অর্জিত শিক্ষা অধিকতর সমৃদ্ধ হয় এবং তত্ত্বের সাথে বাস্তবের মেলবন্ধন রচিত হয়।

বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান শ্রেণীকক্ষে অর্জিত ভানের চেয়ে অনেক বেশি গভীর ও ফলপ্রসূ হয়। শিক্ষা’সফরের আরো কিছু সুফল রয়েছে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যৌথ কাজের মনোভাব সৃষ্টি হয় এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব সম্প্রসারিত হয়। শিক্ষা’সফরের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক বদ্ধ হয়। সবচেয়ে বড় কথা, জীবন ও জগতের নতুন পরিমণ্ডলে মানুষ ও প্রকৃতির সান্নিধ্যে মন উদার, সহানুভূতিশীল এবং স্মৃতিময় হয়ে ওঠে।

শিক্ষা সফর | শিক্ষাবিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার

 

শিক্ষাসফরের পরোক্ষ বা সাংগঠনিক গুরুত্ব :

শিক্ষা’সফরের পরোক্ষ বা সাংগঠনিক গুরুত্বও কম নয়। শিক্ষা’সফরে অংশগ্রহণকারী দলের সদস্য-সদস্যাদের ঠিক করে নিতে হবে কর্মপরিকল্পনা। তারা কোথায় যাবে, কি দেখবে, কি কি তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবে ইত্যাদি। তারা কখন, কোথা থেকে কিভাবে যাত্রা করবে তাও ঠিক করে নিতে হয়। যাত্রার আয়োজন ও যাতায়াতের সব প্রস্তুতির দায়িত্ব 

যাদের ওপর পড়ে তারা বাস্তব কাজে নেমে কার্য সম্পাদনে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করে। সুশৃঙ্খল শিক্ষা’সফরের স্বার্থে তাদের আচরণবিধিও ঠিকঠাক করে নেয়া হয়। শিক্ষা’সফর শেষে তাদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করতে হয়। এসব কাজের মধ্য দিয়ে তারা দলগত কাজের উদ্যোগ ও কর্ম সম্পাদনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ।

বৃহত্তর জীবনের পাঠ অর্জন :

শিক্ষা’সফরের মাধ্যমে সাধারণভাবে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক বিষয়ে অনেক কিছু জানা সম্ভব হয়। দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ ও সীমাবদ্ধতা, শিল্পোয়ন ও শিল্পের সমস্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা দেশের সাধারণ মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার বিশেষ সুযোগ পায়। স্বদেশের সম্ভাবনাময় স্বপ্নেও সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার মহৎ উদ্যোগ গ্রহণে তারা অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠে।

শিক্ষাসফরের প্রক্রিয়া:

শিক্ষা’সফরের বিভিন্ন গুরুত্ব বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষাসফরকে প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। শিক্ষাসফর সাধারণত শ্রেণীভিত্তিক কিংবা দলীয়ভাবে সম্পাদিত হয়। বিষয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে নির্বাচিত করা হয় সফরের স্থান ও সময়। এ সফরের পরিকল্পনা করা হয় লেখাপড়ার ফাঁকে অথবা কোনো ছুটিতে। শিক্ষাসফরের সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত অর্থ তহবিল। প্রতিষ্ঠান থেকে অথবা ব্যক্তিগত চাঁদায় সে তহবিল গঠন করা হয়। শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্যকে যথাযথভাবে সফল করে তোলার জন্য গাইড বা নির্দেশকের প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকগণ এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

উপসংহার :

শিক্ষা’সফরকে শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষা শুধু মুখস্থ বিদ্যার সাহায্যে পরীক্ষা পাস নয়, জ্ঞানের পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করাই শিক্ষার লক্ষ্য। শিক্ষা’সফরের মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের পরিপূরক জ্ঞানার্জন সম্ভব। শিক্ষা’সফরের মাধ্যমে জানা যায় দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, জাতীয় জীবনের বৈশিষ্ট্য, উপভোগ্য হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, লাভ করা যায় মানুষের সঙ্গ। শিক্ষা’সফরে আছে দেশকে নানা দিক থেকে জানার, দেশের সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ।

শিক্ষা সফর | শিক্ষাবিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার

 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধ পঠন-পাঠনে শিক্ষার বিশাল ব্যাপ্তি অর্জন সম্ভব হয় না। পাঠরান্তের শিক্ষা নীরস ও তথ্য ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষাকে প্রাণবন্ত, আকর্ষণীয় ও বাস্তবানুগ করার জন্য শিক্ষামূলক ভ্রমণের বিকল্প নেই। শ্রেণীকক্ষের শিক্ষা বাস্তব ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা’সফরের মাধ্যমে। শ্রেণী শিক্ষার পরিপূরক হিসেবে শিক্ষা’সফরের অভিজ্ঞতা কাজে আসে। শিক্ষাকে জীবনমুখী ও বাস্তবানুগ করার জন্য শিক্ষাসফরের প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment