কম্পিউটার ও আধুনিক বিশ্ব সভ্যতা রচনা

কম্পিউটার ও আধুনিক বিশ্ব সভ্যতা অথবা, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার নিয়ে আজ একটি নমুনা রচনা দেখবো আমরা। তবে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ আপনারা কেউ এটা মুখস্থ করবেন না। রচনা মুখস্থ আপনার প্রবন্ধ রচনার দক্ষতা বাড়ানোর অন্তরায়। বরং এই নমুনা রচনাটি পড়ুন এবং ধারণা নিয় নিজের মতো করে লিখুন।

কম্পিউটার ও আধুনিক বিশ্ব সভ্যতা । প্রবন্ধ রচনা , রচনা লিখন

 

[ কম্পিউটার ও আধুনিক বিশ্ব সভ্যতা ]

ভূমিকা :

শিল্প বিপ্লবের পর থেকে যন্ত্রবিজ্ঞানের জয়যাত্রা অব্যাহত। বাষ্প শক্তি, বিদ্যুৎশক্তি ও আণবিক শক্তি যন্ত্রবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার নিত্য নতুন দ্বার দিয়েছে যুগে। বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান মানব সভ্যতাকে উচ্চতম শিখরে উন্নীত করছে।। বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষকে এমন আরাম ও শ্রমহীন জীবন যাপন অবস্থায় নিয়ে এসেছে যা একদিন মানুষের কল্পনাতীত ছিল। মানুষের মস্তিষ্কের পরিবর্তে যন্ত্র নিজেই যে কাজ সমাধা করেছে এটা অলৌকিক কিছু নয়। মানুষের মস্তিষ্কের সাহায্যের জন্য যে যন্ত্রের আবিষ্কার সেটাই হচ্ছে কম্পিউটার।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার [ Computer Technology ]
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার [ Computer Technology ]

কম্পিউটার কী :

অভিধানিক অর্থে কম্পিউটার হল এক ধরনের গণক যন্ত্র। কিন্তু আজকাল কম্পিউটারকে কেবল গণনাকারী বলা চলে না। এখন তা এক ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ধারণা দেয় যা অগণিত তথ্য বা উপাত্ত গ্রহণ করে অত্যন্ত দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ, গণনা, বিশ্লেষণ ইত্যাদি করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করতে পারে।

উদ্ভাবন ও ক্রমোন্নতি:

কম্পিউটার উদ্ভাবনের জনক হিসেবে খ্যাতির অধিকারী হলেন ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ। তার পরিকল্পিত গণক যন্ত্রই কম্পিউটার নির্মাণের প্রেরণা যুগিয়েছে পরবর্তীকালে। ব্যাবেজের গণক যন্ত্রের মানকল্পনা ছিল অষ্টাদশ শতকের তৃতীয় দশকে। এর প্রায় এক শতাব্দীকাল পরে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিবিদ্যার মেলবন্ধনে মানুষের হাতে এল ইলেকট্রনিক যন্ত্রগণক। ল্যাটিন শব্দ ‘কম্পিউটেয়ার’ থেকে ‘কম্পিউটার’ কথার উৎপত্তি। আধুনিক কম্পিউটারের সূত্রপাত হয়েছে ১৮৩৩ সালে।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার [ Computer Technology ]
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার [ Computer Technology ]
কম্পিউটার ও তার কার্যকারিতা:

কম্পিউটার আসলে এক ধরনের যন্ত্র মস্তিষ্ক। কম্পিউটারের থাকে তিনটি সুস্পষ্ট অংশ—(১) সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট, (২) ইনপুট, (৩) আউটপুট। যে কোন সমস্যা সংক্রান্ত সবরকম তথ্য নিয়ে কাজ করে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। ‘ইনপুট’ তথ্য সম্বলিত নির্দেশ প্রদান করে আর ‘আউটপুট’ প্রকাশ করে গণনা সম্বলিত ফল।

যে যাবতীয় তথ্য নিয়ে কম্পিউটার কাজ করে, তাকে বলে ‘প্রোগ্রাম। কম্পিউটারে তথ্য ও নির্দেশ প্রদানের জন্যে যে বিশেষ ভাষা ব্যবহার করা হয়, তাকে বলে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। আর এসব কিছুকে একত্রে অভিহিত করা হয় ‘কম্পিউটার সফটওয়্যার বলে। এছাড়া কম্পিউটারের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণকারী একটা কাঠামো থাকে, তাকে বলে ‘হার্ডওয়্যার। কম্পিউটারের বড় উপযোগিতা হল তথ্য ও প্রোগ্রামের রদবদল বা সংযোজন ঘটিয়ে একই কম্পিউটারকে দিয়ে নানা রকম কাজ করা যায়।

কম্পিউটার যে আজকের দিনে বিস্ময়ভাবে সব ধরনের কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছে তার মূলে রয়েছে এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন- (১) অত্যন্ত দ্রুত গণনার ক্ষমতা। (২) বিপুল পরিমাণ উপাত্তকে সুসংবদ্ধভাবে যন্ত্র মগজে ধরে রাখার ক্ষমতা। (৩) তথ্য বিশ্লেষণের নির্ভুল ক্ষমতা। (৪) “ডাটা’ ও ‘প্রোগ্রাম অনুসারে কাজ করার ক্ষমতা।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার [ Computer Technology ]
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার [ Computer Technology ]

কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন :

কম্পিউটার আধুনিক যুগে মানুষের পরম নির্ভরশীল বন্ধু। কোটি কোটি সংখ্যার অঙ্গ মিলিয়ে নিয়ে ক্যাশিয়ার কমিটির হাতে অতি অল্প সময়ে তুলে দিয়ে তাকে নিশ্চিত নির্ভাবনায় ঘরমুখো করিয়ে দিতে পারে। কম্পিউটার এখন বড় বড় কল-কারখানায় বসে উৎপাদনের পরিকল্পনা আর তা নিয়ন্ত্রণের খবরদারি করছে, লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করছে। রেলওয়ে, এয়ারলাইন্স, ব্যাংক রিসার্চ সেন্টার, ইনসিওরেন্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারের একচ্ছত্র আধিপত্য । পরীক্ষার ফল প্রকাশ, অপরাধীকে খুঁজে বের করা, পুরনো মামলার নথিপত্র খুঁজে তথ্য সংগ্রহ করে দেয়া, বিজ্ঞাপন প্রচার করা এ সমস্তই এখন করছে মানুষের সৃষ্ট ঐ যন্ত্র-মগজ।

কম্পিউটার চালিত ‘ফ্যারার’ খুঁজে এনেছিল আটলান্টিক মহাসাগরে ভেঙ্গে পড়া বিমানের ‘ব্ল্যাকবক্স। যেসব দুরূহ কাজ মানুষের অসাধ্য, যেসব দুর্গম স্থান মানুষের অপমা সেখানেই কম্পিউটারের প্রয়োগ, আর সেখানে তার অকল্পনীয় সাফল্য। বাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও কম্পিউটার নিয়েছে শিক্ষকের ভূমিকা। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সবই শেখাচ্ছে নিপুণ দক্ষতার সাথে। দাবা, ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানারকম ভিডিও গেম খেলছে কম্পিউটার। এসব খেলায় কম্পিউটার মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে।

মুদ্রণ জগতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে কম্পিউটার। ইন্টারনেটের সাহায্যে ঘরে বসে মুহূর্তেই বিশ্বের যে কোন জায়গায় যে-কোন তথ্য আদান প্রদান করা যাচ্ছে। মানুষের অসাধ্য ও বিপজ্জনক কাজেও কম্পিউটার নিয়ে আসছে অকল্পনীয় সাফলা। আধুনিক জীবনে কম্পিউটার তাই অপরিহার্য। একই কারণে সভ্যতায় কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশও কম্পিউটারের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। এদেশে এখন মূলত মুদ্রণ শিল্প, ব্যাংক-অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার [ Computer Technology ]
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার [ Computer Technology ]

কম্পিউটারের ব্যবহার :

কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহারের প্রভাবে ঢাকার অফিস ও প্রকাশনা শিল্পে দ্রুত কম্পিউটারের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, সামরিক স্থাপনা ইত্যাদি সকলক্ষেত্রেই কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৯৯ সাল থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রেডিট কার্ড। বর্তমানে কম্পিউটারভিত্তিক আর্থিক লেনদেনের এই নিরাপদ ও সহজসাধ্য ব্যবস্থা ক্রেডিট কার্ড সার্ভিসটি ভিসা, মাস্টার কার্ড ও বণিক নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য সফটওয়্যার তৈরি, উন্নয়ন এবং ১৯৯৭ সাল থেকে রপ্তানিযোগ্য মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু হয়।

Laptop
Laptop

কম্পিউটার ও বেকারত্ব:

বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় ফল এই যন্ত্রদানবের ক্ষমতা অপরিসীম। কম্পিউটারের ব্যাপক প্রয়োগ ও ব্যবহার মানুষকে করবে সাময়িক কর্মহীন। যন্ত্র মানুষের ক্রিড়নক না হয়ে মানুষ হবে যন্ত্রের ক্রিড়নক। কম্পিউটারের ব্যবহারে ইতোমধ্যে অফিস, শিল্প প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সংস্থায় কর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য অপরদিকে কম্পিউটার বহু নতুন নতুন কর্মও করছে। অপারেটর, প্রোগ্রামার, হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারি ইত্যাদি পদে বহু লোকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। এভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে কম্পিউটার সাময়িকভাবে কর্মশূন্যতা সৃষ্টি করলেও সামগ্রিকভাবে এটি বহুল কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করছে।

উপসংহার :

বিজ্ঞানের আশীর্বাদ থেকে মানুষ পিছিয়ে থাকতে পারে না। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আজ আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার প্রবেশ অপরিহার্য। কম্পিউটারকেও আজ আর ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। শতাব্দীর এই বিস্ময়কর আবিষ্কারটিই আজ বলে দেবে কোন পথে আমাদের সার্থকতা আর কোন পথে আমাদের অনগ্রসরতার কারণ সেদিনের অপেক্ষায় আমরা আছি।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment