সল বেলো’র উপন্যাসে নারীর প্রতিকৃতি – সৈয়দ আনোয়ারুল হক

সল বেলো’র উপন্যাসে নারীর প্রতিকৃতি – সৈয়দ আনোয়ারুল হক : নোবেল বিজয়ী সল বেলো পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যখন তাঁর কালজয়ী উপন্যাস নির্মাণ করে চলেছেন, আমেরিকান সমাজ ও সংস্কৃতিতে নারীবাদ তখন একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা। তবে এটা বিস্ময়ের ব্যাপার যে বেলো তাঁর সৃষ্ট নারী চরিত্রের প্রতি সুস্পষ্টভাবে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। শুধুমাত্র পুরুষদের দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি তাদের সৃষ্টি করে থামেননি, বরং তাঁর প্রধান উপন্যাসগুলোতে নারীদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন লক্ষণীয়ভাবে গৌণ ভূমিকা পালনের মধ্যে।

 

সল বেলো’র উপন্যাসে নারীর প্রতিকৃতি - সৈয়দ আনোয়ারুল হক
সল বেলো

[ সল বেলো’র উপন্যাসে নারীর প্রতিকৃতি – সৈয়দ আনোয়ারুল হক ]

তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ Herzog ও Humboldt’s Gifi উপন্যাস দু’টিতে কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্রের বুদ্ধিদীপ্ত অন্বেষণই প্রধান উপজীব্য-রোমানা ও রেনাটা নামের নারী চরিত্র দু’টি বুদ্ধিদীপ্ত নায়কদের সম্ভোগের শিকার। তবে বলা যায়, এই সম্ভোগের মধ্য দিয়ে নায়কদের বুদ্ধিদীপ্ত অন্বেষণকে তাঁরা এগিয়ে নিয়ে গেছেন চূড়ান্ত পর্যায়ে। বেলো’র অন্যান্য প্রধান উপন্যাস যেমন Dangling Man, The Victim, Mr. Sammler’s Planet এবং Seize the Day-র কাহিনী বিন্যাসে নারীর প্রতি বেলো’র নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কোন পরিবর্তন দেখা যায় না।

নোবেল বিজয়ের পরবর্তীতে রচিত The Dean’s December উপন্যাসেই দেখি মিনূনা নামের বুদ্ধিদীপ্ত এক নারীকে, যার অবস্থান উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে। এটা নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রম। তবে এই ব্যতিক্রমের পেছনে সমালোচকদের ক্রমাগত সমালোচনা নিঃসন্দেহে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭৬ সালে Jo Brans নামের এক প্রশ্নকারীর তীর্যক প্রশ্ন ছিল: “আধুনিক কোন নারীকে আপনার কোন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রূপে উপস্থাপন করেননি কেন?” কিছুটা দ্বিধার সঙ্গে বেলো’র জবাব: “মাঝে মধ্যে তেমনটি আমি ভেবেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর করে ওঠা হয়নি।

আমি এমন সব সমস্যা নিয়ে লিখি যার সমাধান ওভাবে করা যায়না।” বেলো’র জবাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর নেতিবাচক মনোভাব। মূলতঃ তিনি মেধাগত বিকাশ কেন্দ্রীয়ভাবে উপস্থাপন করেন তাঁর উপন্যাসে — যা নারীর চেয়ে পুরুষদের পক্ষেই এগিয়ে নেয়া সহজ। ১৯৮৭ সালে Ada Aharoni নামের আর একজন প্রশ্নকারী জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর পরবর্তী উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র নারী হবার সম্ভাবনা কতটুকু। এবার কিছুটা রসিকতার সুরে বেলো’র জবাব: “তেমনটি হতে পারে। নারীরাও আজকাল ফুলপ্যান্ট পরছে। যারা ফুলপ্যান্ট পরে তাদেরই আমি সহজে বুঝি।” কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কোন নারী চরিত্র বেলো’র পরবর্তী উপন্যাসে উপস্থাপিত হয়নি।

Herzog, 1964 1st ed by Saul Bellow [ সল বেলো ]
Herzog, 1964 1st ed by Saul Bellow [ সল বেলো ]

নারীর প্রতি বেলো’র নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখি তাঁর প্রথম উপন্যাস Dangling Man-এ। উপন্যাসে ঈভাকে উপস্থাপন করা হয়েছে তাঁর কর্মহীন স্বামী যোসেফের উৎপীড়ক হিসেবে। ডায়েরীর আঙ্গিকে রচিত এই উপন্যাসে দেখি যোসেফ জীবনের সংঘাত ও সমস্যা নিয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলেন। উইকিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে গ্র্যাজুয়েট যোসেফ তার স্ত্রী ঈভাকে নিয়ে হতাশায় ভুগছেন জীবনে। মন-মানসিকতার দিক থেকে তাঁরা সম্পূর্ণ ভিন্ন গ্রহের অধিবাসী। স্ত্রী সম্পর্কে যোসেফের অকপট উক্তি : “এমন তার হাবভাব যে কথা বলতে মন চায় না।

বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার সঙ্গে আর কথা বলতে পারি না। আসলে এমন অনেক বিষয় আছে যা তার সঙ্গে শেয়ার করা যায় না।” চাকুরীহীন জীবনে যোসেফ যখন তাঁর স্ত্রীর ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, তখন থেকেই তাঁদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি। ঈভা তাঁকে কিছু কাজ করার দায়িত্ব দেন, যেমন ব্যাঙ্কে তাঁর বেতনের চেক ভাঙ্গানো, কিন্তু অপরিচিত হবার কারণে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সন্দেহের বশে তাঁকে ফিরিয়ে দেয়।

ঘটনাটিকে অবমাননাকর মনে হয় যোসেফের কাছে। বিষয়টা তাঁকে পীড়িত করে। এ ব্যাপারে যোসেফের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ : “মুক্ত স্বাধীনভাবে তাঁর অবস্থান ঈভা মেনে নিতে পারছে না, কারণ সে নিজে লাইব্রেরীতে কষ্টের কাজে নিয়োজিত। সংসারের হাল ধরা স্ত্রী তাঁকে ঘরে বসে খাওয়াতে অনিচ্ছুক। বিনিময়ে তাঁকে দিয়ে কিছু করাতে চান”। স্ত্রীর আচরণে ক্ষুব্ধ যোসেফ ভুলতে চান বাস্তবতাকে। তিনি হারিয়ে যান বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায়, গভীর আগ্রহে পাঠ করেন ফরাসী লেখক দিদেরোর সব লেখা। উৎপীড়ক স্ত্রীর অস্তিত্বই ভুলতে চান যোসেফ। তাই মানসিক স্বস্তি ও ভালবাসার অন্বেষণে তিনি ঝুঁকে পড়েন সুন্দরী কিটি’র প্রতি।

Humboldt's Gift novel by Saul Bellow [ সল বেলো ]
Humboldt’s Gift novel by Saul Bellow [ সল বেলো ]

বেলো’র পরবর্তী উপন্যাসে নারীর চিত্রায়ণ একই নেতিবাচক দৃষ্টিতে। The Victim উপন্যাসে এলেনার বৃদ্ধা মা উপস্থাপিত হয়েছেন এক ধর্মান্ধ মহিলার অবয়বে। ক্যাথলিক মতবাদে বিশ্বাসী এই মহিলা ইহুদির সঙ্গে মেয়ের বিয়ে কিছুতেই মানতে পারেন না। এলেনাও তাঁর মায়ের মত ধ্যান ধারণায় অবাস্তববাদী যদিও স্বামী ম্যাক্স তাঁর কর্মক্ষেত্র টেক্সাসে বাস করেন, এলেনা ছোট্ট ছেলে মিকিকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকেন নিউ ইয়র্কের স্টাটেন আয়ল্যান্ডে। অন্ধ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে গুরুতর অসুস্থ মিকির সুচিকিৎসার কোন ব্যবস্থা করেন না এলেনা।

উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আশা, ম্যাক্সের ভাই, পেশায় সাংবাদিক, নিউ ইয়র্কে পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেও ভাইপোর দেখাশোনা করেন এবং প্রায়ই ছুটে যান স্টাটেন আয়ল্যান্ডে। মিকি যখন মারাত্মকভাবে পীড়িত, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়ে তিনি উপস্থাপিত হন এবং দ্রুত মিকিকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য চাপ দেন এলেনাকে। কিন্তু এবারে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বড় দেরী হয়ে গেছে। এলেনার সিদ্ধান্তহীনতার কারণে মিকির অকাল মৃত্যু ঘটে, আর এই ট্রাজেডীর জন্য দায়ী এলেনা ও তার বৃদ্ধা মায়ের কুসংস্কার ও অবাস্তব ধ্যান ধারণা।

Mr. Sammler’s Planet উপন্যাসে দেখি যৌন স্বাধীনতার প্রতীক এ্যাঞ্জেলা নামের এক উচ্ছৃঙ্খল তরুণীকে। উপনাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র স্যামলারের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে এই প্রজন্মের উচ্ছৃঙ্খলতা ও অধঃপতন। বেলো’র উপন্যাসে নারীদের যৌন পুতুল (Sex Toy) অবয়বে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে এ্যাঞ্জেলা প্রথম সারির একজন। যৌনতা ও অপরাধ জগতে এ্যাঞ্জেলার অবাধ বিচরণ। কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকারী ও ধর্ষকদের আইনের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি আর্থিক সাহায্য পাঠান। H. G. Wells-এর যৌনতা বিষয়ক মতবাদে বিশ্বাসী এ্যাঞ্জেলা,নিজেই রূপান্তরিত এক যৌন অভিযানকারীতে। স্যামলারের কাছে তিনি অকপট বর্ণনা করেন তাঁর যৌন অভিজ্ঞতা। হোয়ারটনের সঙ্গে সারা রাতের সম্ভোগও অবলীলায় চলে আসে তাঁদের আলোচনায়।

Humboldt's Gift novel by Saul Bellow [ সল বেলো ]
Humboldt’s Gift novel by Saul Bellow [ সল বেলো ]

অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র কলেবরের যে উপন্যাসটি নোবেল বিজয়ীর মালা এনে দিয়েছে সল বেলোকে তার নাম Seize the Day. এই উপন্যাসে মার্গারেটও উপস্থাপিত হয়েছেন তাঁর বিচ্ছিন্ন স্বামী টমির উৎপীড়ক হিসেবে। সমাজে ডাক্তার হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত পিতার একমাত্র ছেলে টমি স্কুলের পাঠ শেষ না করেই অন্ধ রোমান্টিকতায় হলিউডে ছুটে যান নায়ক হবার বাসনায়। শেষ পর্যন্ত ছোট দু’একটি চরিত্রে ব্যর্থ অভিনয় শেষে সাত বছর পর হলিউড থেকে ফিরে আসেন নিউ ইয়র্কে। কিন্তু সিনেমার মিসফিট বাস্তব জীবনেও রূপান্তরিত হন মিসফিটে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নেমে আসে ব্যর্থতা।

পিতার অসম্মতি সত্ত্বেও মার্গারেটকে বিয়ে করেন টমি। পরবর্তীতে মানসিক কষ্ট ও আর্থিক টানাপোড়েনে জর্জরিত হন তিনি। বিচ্ছিন্নভাবে বাস করা সত্ত্বেও মার্গারেট ও দুই ছেলের আর্থিক দায়িত্ব নিতে হয় টমিকে। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে টমি পোস্ট-ডেটেড্ চেক দেন মার্গারেটকে, যার তীব্র প্রতিবাদ তিনি জানান টেলিফোনে। টমির কোন সমস্যাই তিনি বুঝতে রাজি নন। স্ত্রীর এই মনোভাবকে টমির মনে হয় স্বার্থপর এক সুযোগ সন্ধানীর। অতীত জীবনে ফিরে যান টমি। সেখানেও মার্গারেটের পরতার সুস্পষ্ট চরণ।

বিয়ের পর টমির আর্থিক সহযোগিতায় মার্গারেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে, যদিও তা ছিল বেশ কিন্তু টমি সম্মত হন এই ধারণায় যে উচ্চশিক্ষা লাভ শেষে মার্গারেট আকর্ষণীয় বেতনের চাকুরী পাবেন, যা তাদের সংসারে সমৃদ্ধি আনবে। কিন্তু টমি প্রচণ্ডভাবে আশাহত হন যখন মার্গারেট কোন চাকুরী করতে অস্বীকার করেন, অজুহাত কিশোর দু’ছেলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান করা; তাদের নষ্ট ছেলের দল থেকে রক্ষা করা।

টমির মানসিক কষ্ট আরো বেড়ে যায় যখন তিনি জানতে পারেন, তাঁর কষ্টার্জিত টাকায় মার্গারেট অন্য পুরুষের সান্নিধ্যে সময় কাটান। মার্গারেটও জেনে গেছেন অলিভের সঙ্গে টমির রোমান্টিক সম্পর্কের কথা। ইচ্ছাকৃতভাবে তিনি ডিভোর্সের মামলাটি ঝুলিয়ে রাখছেন যাতে টমি সহসা অলিভকে বিয়ে করতে না পারেন। টমির অনুধাবন, মার্গারেট তাঁকে গলা টিপেই হত্যা করতে চান। মার্গারেট চরিত্রের এমন উপস্থাপন অবশ্যই নেতিবাচক।

Jackson Benson হেমিংওয়ের নারী চরিত্রদের “the all-round bitch, the aggressive unwomanly female” অভিধায় যে ভাবে চিহ্নিত করেছেন, সল বেলো’র নারী চরিত্রদের বেলায়ও তা প্রয়োজ্য। বেলো’র অন্যতম প্রধান উপন্যাস Herzog-এ দেখি ম্যাডেলেইন বুদ্ধিদীপ্ত নায়কের যৌন চেতনা জাগিয়ে দেন যৌনদেবীর অবয়বে। শুধু মাত্র সমালোচকরাই নয়, উপন্যাসের অনেক চরিত্রই তাকে দুঃশ্চরিত্রা নারীরূপে চিহ্নিত করেছে।

আইনজীবী স্যানডরের ভাষায় ম্যাডেলেইন হচ্ছে “strong-minded bitch, terrifically attractive She’s less of a whore than most.” অধ্যাপনায় নিযুক্ত হারজগ ম্যাডেলেইনের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে স্ত্রী ডেইজীকে পরিত্যাগ করে ছাত্রী ম্যাডেলেইনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যদিও ম্যাডেলেইনের বয়স তখন কুড়ির কোঠায়, আর হারজগ চল্লিশ ছাড়িয়ে গেছেন। অসম বিবাহের পরিণতিতে হারজগ পুরোপুরি চলে যান ম্যাডেলেইনের হাতের মুঠোয়।

সুন্দরী তরুণীর লেখাপড়ার যাবতীয় খরচসহ তাঁকে কিনে দিতে হয় নতুনভাবে সাজানো বাড়ী। হারজগের আশা ছিল রোমান্টিকদের ওপর বই লেখার ব্যাপারে ম্যাডেলেইন তাঁকে সাহায্য করবেন, কিন্তু বাস্তবে ঘটে উল্টোটা। নিজের লেখাপড়া নিয়ে ম্যাডেলেইন এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে বই লেখার ব্যাপারে সময় দেয়াতো দূরের কথা, তাঁদের দাম্পত্য জীবনেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।

স্ত্রীর ভালবাসায় ঘাটতি লক্ষ্য করে বিচলিত হারজগ বিষয়টি মীমাংসার জন্য তাঁর ঘনিষ্টতম বন্ধু গারস্বাচের সাহায্য নেন। কিন্তু হারজগ চরমভাবে প্রতারিত হন যখন তাঁর বন্ধু মধ্যস্ততার নামে ম্যাডেলেইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। বুদ্ধিদীপ্ত আকাঙ্খা থাকা সত্ত্বেও ম্যাডেলেইনের চরিত্রায়ণ অবশ্যই নেতিবাচক।

Herzog উপন্যাসের অপর উল্লেখযোগ্য নারী চরিত্র রামোনা এবং হারজগের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ভিত্তিও যৌনতা। হারজগের দৃষ্টিতে রামোনা হচ্ছেন “sexual professional (or priestess).” রামোনার যৌন আকর্ষণ তাঁকে পাগল করে দেয়। হারজগ ভাবেন, তাঁর জীবনের সব দুঃখ যন্ত্রণাকে রামোনা যৌন উত্তেজনায় রূপান্তরিত করেছেন। কল্পনায় তিনি দেখেন কিভাবে বাতি নিভিয়ে তিনি বিছানায় অত্যাবশ্যকীয় কাজে নিয়োজিত হবেন। রামোনার ইন্দ্রিয়পরায়ণ আকর্ষণ তীব্রভাবে আলোড়িত করে হারজগকে যখন সুগন্ধিত রামোনা দরজা খুলে স্বাগত জানান হারজগকে। সম্ভোগের এক পর্যায়ে তৃপ্ত রামোনা বিধাতাকে ধন্যবাদ দেন হারজগের পারঙ্গমতায়।

নারীকে যৌনদেবীর অবয়বে চিত্রায়ণ আরো দেখা যায় বেলো’র শ্রেষ্ঠতম উপন্যাস Humboldt’s Gift-এ। এ উপন্যাসের নায়ক হামবোল্ড উঁচুমানের এক কবি ও মেধাবী লেখক। কিন্তু কেন্দ্রীয় চরিত্র চার্লি হামবোল্ডের বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক। প্রতিভাধর চার্লি একাধারে ইতিহাসবিদ, জীবনী লেখক ও চিত্রনাট্য রচয়িতা। সমস্যায় জর্জরিত তাঁর জীবন এবং নারীরূপী যৌনদেবীরাই তাঁর সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে। চার্লির যৌন চেতনা হামবোল্ডের মতই তীব্র। তাঁর জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নারী রেনাটার সঙ্গে সম্পর্কের আগে অসংখ্য নারী এসেছে তাঁর জীবনে।

এদের মধ্যে রয়েছে তাঁর কৈশোরের প্রেমিকা নাওমি, ডেমমি ও পরিত্যক্ত স্ত্রী ডেনিস। পঞ্চাশোত্তর চার্লির আচরণ আবেগপ্রবণ তরুণ প্রেমিকের মত। আদালতে জুরীর দায়িত্ব পালন কালে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন রেনেটার পাগল করা কমনীয়তা ও মোহনীয় স্তনযুগল দেখে। জুরীর আসনে বসা অবস্থাতেই চার্লি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হন রেনাটার যৌন আবেদনে। পূর্ণ যৌন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী আইনজীবী জাথমার চার্লির সঙ্গে রেনাটার গোপন সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন। এমন একটি তীব্র বাসনা নিয়ে যে সময়ের বিবর্তনে তাদের মধ্যে ত্রয়ী সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।

চার্লির দৃষ্টিতে, রেনাটা তার “কামসূত্র নারী” যার সঙ্গে স্বাস্থ্যপ্রদ নিয়মিত দৈহিক মিলনের কথা ভেবে তিনি উৎফুল্ল হন। হিথরো বিমান বন্দরে ব্যাগের উপরিভাগে রেনাটার জন্ম নিয়ন্ত্রক দ্রব্যগুলোর সচেতন প্রদর্শনী যৌনতার ব্যাপারে সমকালীন নারীর উদার মনোভাব প্রতিফলিত হয়। দৃশ্যটি চার্লিকে কিছুটা উত্তেজিত করলেও গভীরভাবে তিনি ভাবতে থাকেন এর তাৎপর্য আকর্ষণীয় পুরুষটির দেখা পাবার সম্ভাবনায় হাতের কাছেই রয়েছে সব প্রস্তুতি।

প্রবন্ধের সমাপ্তিতে, নারীর প্রতি বেলো’র নেতিবাচক মনোভাবের বিশ্লেষণ অপ্রাসঙ্গিক হবে না। বিশিষ্ট সমালোচক আরভিং মারলিন এ প্রসঙ্গে তাঁর Saul Bellow’s Fiction গ্রন্থে লিখেছেন, “বেলো’র উপন্যাসে প্রতিফলিত পুরুষের পৃথিবীতে নারী তেমন প্রয়োজনীয় নয়।” পিতৃতান্ত্রিক ইহুদী পরিবারে নারীর ভূমিকা গৌণ। ইহুদী লেখক সল বেলো’র এই পারিবারিক মূল্যবোধও উপন্যাস রচনায় নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দেখাতে প্রভাবিত করেছে নিঃসন্দেহে। লেখক হিসেবে অবশ্যই তা বেলো’র একটি সীমাবদ্ধতা।

সহায়ক-গ্রন্থ :

  • আদা আহারনি: Women in Bellow’s Novels, পুনর্মুদ্রিত Saul Bellow in the 1980’s (A Collection of Critical Essays), সম্পাদনা গ্লোরিয়া এল. ত্রুনিন এবং এল. এইচ. গোল্ডম্যান, মিশিগান Michigan State University Press, ১৯৮৯।
  • জ্যাকসন জে. বেনসন Hemingway: The Writer’s Art of Self Defense, মিনিয়াপোলিস : Minnesota University Press, ১৯৬৯।
  • ওয়ারেন ফ্রেঞ্চ সম্পাদিত Saul Bellow, ব্লুমিংটন Indiana University Press, ১৯৮২।
  • আরভিং মারলিন Saul Bellow’s Fiction; লন্ডন Feffer & Simons, ১৯৬৯।

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment