আজ আমাদের প্রবন্ধ রচনার বিষয়বস্তু বাংলা সাহিত্যের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ বা “বাংলা ভাষা ও সাহিত্য”, বা ” বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত”, বা ” বাংলা সাহিত্যের পরিচয়” বা “বাংলা সাহিত্যের বিকাশ”। আমরা নমুনটি তৈরি করে দেব। আপনারা এখান থেকে তথ্য এবং লেখার ধরণ দেখে চর্চা করে নিজের মতো লিখবেন।

বাংলা সাহিত্যের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ :
ভূমিকা :
প্রতিটি জাতির নিকট তাদের ভাষা মধুর ও প্রাণপ্রিয় পৃথিবীর প্রতিটি ভাষারই একটি নিজস্ব সাহিত্য জগৎ রয়েছে, যা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। প্রতিটি ভাষা ও সাহিত্য তাদের বৈশিষ্ট্য ও মহিমা দান করে বিশ্বসাহিত্যকে করেছে মহিমান্বিত ও পরিপুষ্ট।
সাহিত্য কি? :
অল্প কথায় সাহিত্যের সংজ্ঞা প্রদান করা অত্যন্ত কঠিন। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার অন্ত নেই। সে নিজেকে বাইরে দেখতে চায়। মানুষের মধ্যে, অপরের মধ্যে সে আপনাকে পেতে চায় এবং পেতে চায় বলেই সেও স্রষ্টার মতো নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। স্রষ্টা বিচিত্ররূপে সৃষ্টির আনন্দে জগৎ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ তেমনি নিজের ভাব-কল্পনাকে বহু রূপ পরিগ্রহ করিয়ে তার মাধুর্য উপভোগ করতে চায়। এভাবে আত্মপ্রকাশের জন্য মানুষের মনে তীব্র আকাঙ্ক্ষার জন্ম নেয়। মানুষের এ আত্মপ্রকাশের বাণীবদ্ধ রূপই হয়ে ওঠে সাহিত্য।
“Literature is the reflection of human mind.” এ কারণেই বলা সাহিত্য হচ্ছে মানব মনের প্রতিচ্ছবি’। সাহিত্য হচ্ছে আলোর পৃথিবী, সেখানে যা আসে আলোকিত হয়ে আসে। কালো এসে এখানে নীল হয়ে যায়, অসুন্দর হয়ে যায় সুন্দর শিল্পকলা।
আত্মপ্রকাশের বাসনা, পারিপার্শ্বিকের সাথে সংযোগ কামনা, কল্পজগতের প্রয়োজনীয়তা এবং রূপপ্রিয়তা—এসব সাহিত্য সৃষ্টির উৎস। সুতরাং সাহিত্য বলতে সাহিত্যিকের মন, বস্তু জগৎ ও প্রকাশভঙ্গি এ তিনের সমন্বয়কে বোঝায়। সর্বকালের সহৃদয়জনের হৃদয়ভেদ্য ভাবকে আত্মগত করে আবার তাকে পরের করে প্রকাশই সাহিত্য। মোটকথা বিশ্বপ্রকৃতি, স্রষ্টা, মানব ও জীবজগৎ সকলই সাহিত্যের সামগ্রী। আর এ সামগ্রী যখন সাহিত্যিকের কল্পনারঞ্জিত হয়ে ভাবময়রূপে আত্মপ্রকাশ করে তখনই তা সাহিত্য।
সাহিত্যের উদ্দেশ্য :
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় অন্তরের জিনিসকে বাহিরের, ভাবের জিনিসকে ভাষার, নিজের জিনিসকে বিশ্বমানবের ও ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের করে তোলা সাহিত্যের কাজ। এর সাধারণ উদ্দেশ্য আনন্দদান। সাহিত্য জগৎ ও জীবনকে সুন্দর করে এবং কোনো কোনো সময় সত্যকে আমাদের কাছে গোচর বা প্রত্যক্ষ করে আনন্দ দান করে। মানুষের জীবনের দুঃখ-বেদনা, হাসি-কান্না ও বিচিত্র সমস্যা যে সাহিত্যের উপকরণ, সে সম্বন্ধে সন্দেহ নেই। কিন্তু সাহিত্যিক যখন সৃষ্টি করেন, তখন জীবনের নিগূঢ় রহস্য তাকে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি সকলের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখে প্রেমের দ্বারা, প্রীতির দ্বারা মানুষকে গ্রহণ করে, তার সৃষ্টিকে রূপময় করে তোলেন।
![রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]](https://banglagurukul.com/wp-content/uploads/2022/03/Rabindranath-Tagore-রবীন্দ্রনাথ-ঠাকুর-8-216x300.jpg)
সাহিত্য এভাবে মানুষ, প্রকৃতি বা কোনো ভাবনা-চিন্তাকে আমাদের কাছে নিঃসংশয়িতরূপে সত্য করে তোলে। সাহিত্য থেকে বিভিন্ন মনোবৃত্তি, শিক্ষা, পারিপাঠি ও সংস্কৃতিসম্পন্ন জনগণ বিভিন্ন অর্থ গ্রহণ করে। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে কোনো সামাজিক, নৈতিক বা রাষ্ট্রিক শিক্ষাদান বা মতবাদ প্রচার করা সাহিত্যের উদ্দেশ্য নয়।
বাংলা ভাষার জন্ম :
অন্য সব কিছুর মতো ভাষাও জন্ম নেয়, বিকশিত হয়, কালে কালে রূপ বদলায়। আজ যে বাংলা ভাষায় আমরা কথা বলি, কবিতা লিখি, গান গাই অনেক আগে এ ভাষা এরকম ছিল না। হাজার বছর ধরে ক্রমপরিবর্তনের ফলে বাংলা ভাষা বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। যে প্রাচীন ভাষা থেকে বাংলা ভাষা জন্ম হয়েছে তার নাম ‘প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা’।
অনেকে মনে করেন, বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটেছে সপ্তম শতাব্দীতে। আবার কেউ কেউ মনে করেন ৯৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি কোনো সময়ে বাংলা ভাষার জন্য হয়েছিল। জন্মের পর থেকে বাংলা ভাষা পাথরের মতো এক স্থানে বসে থাকেনি। এর পরিবর্তন হয়েছে মানুষের কণ্ঠে কবিদের রচনায়। এ বদলের প্রকৃতি অনুসারে বাংলা ভাষাকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করা হয়।
ক. প্রথম স্তরটি প্রাচীন বাংলা ভাষা। এর প্রচলন ছিল ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এরপর দেড়শ বছর ১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত বাংলা ভাষার কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি।
খ. দ্বিতীয় স্তরটি মধ্যযুগের বাংলা ভাষা। এটি ১৩৫০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
গ. তৃতীয় স্তরটি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয় আধুনিক বাংলা ভাষা—এ সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কিছু কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান আধুনিক ভাষার সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যের জন্ম ও এর তিন যুগ :
আনুমানিক দশম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে রচিত হচ্ছে বাংলা সাহিত্য। তাই বাংলা সাহিত্যের বয়স এক হাজার বছরেরও বেশি। আর এ সময়েই সৃষ্টি হয়েছে সুবিশাল এক সাহিত্য। হাজার বছরে বাংলা সাহিত্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক নিয়েছে, এ বাঁকগুলো অত্যন্ত স্পষ্ট। সুতরাং বাংলা সাহিত্যকে ভাগ করা হয় তিনটি যুগে। যুগ তিনটি হচ্ছে :
ক. প্রাচীন যুগ :
৯৫০ থেকে ১২০০ পর্যন্ত।
খ. মধ্যযুগ:
১৩৫০ থেকে ১৮০০ পর্যন্ত।
গ. আধুনিক যুগ :
১৮০০ থেকে বর্তমান পর্যন্ত। এ তিন যুগেই বাংলা সাহিত্য বিকশিত হয়। কিন্তু বিষয়বস্তুতে, রচনারীতিতে এ তিন যুগের সাহিত্য তিন রকম।

প্রাচীন যুগের প্রথম প্রদীপ চর্যাপদ :
বাংলা ভাষার প্রথম বইটির নাম চর্যাপদ। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার থেকে আবিষ্কার করেন এ দুর্লভ বইটি কিন্তু এর ভাষা ছিল দুর্বোধ্য, বিষয়বস্তু দুরূহ। এ চর্যাপদকে নিয়ে বিভিন্ন ভাষার পণ্ডিতদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। কিন্তু বাংলা ভাষার এক সেরা পণ্ডিত ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ সালে ইংরেজিতে ‘বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ’ নামে বই লিখে প্রমাণ করেন চর্যাপদ আর কারো নয়, বাঙালির।
চর্যাপদের ভাষা বাংলা। এরপর ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ডক্টর সুকুমার সেন প্রমুখ পণ্ডিতগণ এর ভাষা ও বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেন চর্যাপদ বাংলা ভাষায় রচিত। চর্যাপদ কতকগুলো পদ বা কবিতা বা গানের সংকলন। এতে আছে ৪৬টি পূর্ণ কবিতা একটি ছেঁড়া খণ্ডিত কবিতা। কবিতাগুলো লিখেছিলেন ২৪ জন বৌদ্ধ বাউল কবি। এ কবিরা সকলের জন্যে সাহিত্য রচনা করেননি, করেছেন নিজেদের জন্যে। তারা এ কবিতাগুলোতে নিজেদের সাধনার গোপন কথা বলেছেন। তবু মনের ছোঁয়ায় তাতে লেগেছে সাহিত্যের নানা রঙ ও সৌরভ।
চর্যাপদের কবিতাগুলোতে শুধু ধর্মের কথা নেই, আছে ভালো কবিতার স্বাদ। আছে সেকালের বাংলার সমাজের ছবি, আর সে ছবিগুলো এতো জীবন্ত যে, মনে হয় এইমাত্র প্রাচীন বাংলার গাছপালা, আর সাধারণ মানুষের মধ্যে একটু হেঁটে এলাম। এখানে আছে গরিব সাধারণ মানুষের দুঃখ-বেদনার কথা, ও আনন্দের কথা, আছে নদী, ফুল ও আকাশের কথা। একটি কবিতায় এক দুঃখী কবি তার সংসারের অভাবের ছবি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী করে তুলে ধরেছেন। কবির ভাষায়—
টালত মোর ঘর নাহি পড়বেষী
হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী।
বেঙ্গ সংসার বড়হিল যায়।
দুহিল দুধ কি বেণ্টে ষামায়া
কবি বলেছেন, টিলার ওপরে আমার ঘর, আমার কোনো প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে আমার ভাত নেই, আমি প্রতিদিন উপোস থাকি। ব্যাঙের মতো প্রতিদিন সংসার আমার বেড়ে চলেছে, যে দুধ দোহানো হচ্ছে আবার ফিরে যাচ্ছে গাভীর বাঁটে। এরূপ চর্যাপদে আছে সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকের অত্যাচারের ছবি। আজকাল শ্রেণীসংগ্রামের জন্যে রচিত হয় সাহিত্য। সুতরাং বলা যায়, বাংলা সাহিত্যে শ্রেণী সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল প্রথম কবিতাগুচ্ছেই। এ কবিতাগুলোতে আছে অনেক সুন্দর সুন্দর উপমা; আছে মনোহর কথা, যা সত্যিকার কবি না হলে উপলব্ধি করা যায় না। কবি কম্বলাম্বরপদ, তার ধনসম্পদের কথা বলেছেন—
সোনে ভরিতী করুণা নাবী।
রূপা থুই নাহিক ঠাবী৷
কবি বলেছেন, আমার করুণা নামের নৌকা সোনায় সোনায় ভরে গেছে। সেখানে আর রুপো রাখার মতো কথা সাথে সাথে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা ‘সোনার তরী’র সেই পংক্তিগুলো, যেখানে কবি বলেছেন—
ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই – ছোট সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
প্রাচীন যুগের বাংলা সাহিত্য ছিল কবিতা ও গাননির্ভর। আগে কবিরা কবিতা গাইতেন, পাঠকেরা শুনতো চারদিকে তাই এগুলো সাথে কবিতা। বাঙালির প্রথম গৌরব এগুলো।
বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ:
১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত দেড়শো বছর বাংলা ভাষায় আর কিছু রচিত হওয়ার ইতিহাস পাওয়া যায় না। তাই ফসলশুন্য এ সময়টিকে বলা হয় অন্ধকারের যুগ। এ সময়টাকে নিয়ে অনেকে ভেবেছেন, অনেক পণ্ডিত অনেক আলোচনা করেছেন। কিন্তু কেউ কোনো সাহিত্য নিদর্শন খুঁজে পাননি। তবে অন্ধকার সময়ের রচনা সম্বন্ধে আমরা অনুমান করতে পারি যে, এ সময় যা রচিত হয়েছিল, তা কেউ লিখে রাখেনি। তাই এতোদিনে তা মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে গেছে। এরপর থেকে বাংলা সাহিত্যের ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া যায়। ১৩৫০ সালের পরেই আসেন বড় কবিরা, আসেন বড়ু চণ্ডীদাস তার ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য নিয়ে এবং আসর মাতিয়ে তুলেছেন অনেক কবি ।
![অক্ষয়চন্দ্র সরকার, বাঙ্গালী লেখক [ Akshay Chandra Sarkar, Bengali Writer ]](https://banglagurukul.com/wp-content/uploads/2022/03/Akshay-Chandra-Sarkar-অক্ষয়চন্দ্র-সরকার-224x300.jpg)
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ :
অন্ধকার যুগের পরে পুনরায় প্রদীপ জ্বলে, আসে মধ্যযুগ। এ যুগটি সুদীর্ঘ। এ সময়ে রচিত হয় অসংখ্য কাহিনীকাব্য, গীতিকবিতা; মানুষ আর দেবতার কথা গীত হয় একসাথে। আগের মতো সাহিত্য আর সীমাবদ্ধ হয়ে থাকেনি, এর মধ্যে দেখা দেয় বিস্তার। এর ফলে সাহিত্যে স্থান পায় দেবতা ও দৈত্য, মানুষ ও অতিমানুষ; আসে গৃহের কথা, সিংহাসনের কাহিনী। এ সময়ে যারা বড় কবি, তাদের মধ্যে বড়ু চণ্ডীদাস, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, বিজয়গুপ্ত, চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, ভরতচন্দ্র, আলাওল, কাজী দৌলত প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান ফসল হচ্ছে মঙ্গলকাব্য।
এ যুগে অসংখ্য কবি রচনা করেন মঙ্গলকাব্য। মঙ্গলকাব্যকে মধ্যযুগের উপন্যাস বলা হয়। এগুলো সব দীর্ঘকাব্য। দেবতাদের কাহিনীই এগুলোর মুখ্য উপজীব্য। এ যুগের সকল সাহিত্যই দেবতাকেন্দ্রিক। মানুষ সে সময়ে প্রাধান্য লাভ করেনি। মানুষের সুখ-দুঃখের কথা এসেছে দেবতার কথা প্রসঙ্গে। তবে দেবতার ছদ্মবেশে এসব কাব্য জুড়ে আছে মানুষ। মধ্যযুগের তথা বাংলা ভাষার প্রথম মহাকবি হলেন বড়ু চণ্ডীদাস। তিনি রচনা করেন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামক এক অসাধারণ দীর্ঘ কাব্য। এ কাব্যটির নায়ক-নায়িকা কৃষ্ণ ও রাধা।

মঙ্গলকাব্যের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ‘চণ্ডীমঙ্গল’ আর ‘মনসামঙ্গল’। চণ্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি হলেন কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী এবং রায়গুণাকর ভরতচন্দ্র। মনসামঙ্গলের দুজন সেরা কবি হলেন বিজয়গুপ্ত এবং বংশীদাস। চণ্ডী পুজো প্রচারের জন্যে যে মঙ্গলকাব্য, তার নাম চণ্ডীমঙ্গল কাব্য, আর মনসা দেবীর পুজো প্রচারের জন্য যে কাব্য রচিত তার নাম মনসামঙ্গল কাব্য। চাঁদ সদাগর, বেহুলা লখিন্দরের কাহিনী আজও বাংলা সাহিত্যে প্রেমিকদের মনকে নাড়া দেয়।
মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ ফসল বৈষ্ণব পদাবলী। এ কবিতাগুলো ক্ষুদ্র হলেও এগুলোতে যে আবেগ প্রকাশিত হয়েছে, তা তুলনাহীন। এ কবিতার নায়ক-নায়িকা কৃষ্ণ ও রাধা। বৈষ্ণব কবিরা কখনও রাধার বেশে, কখনো কৃষ্ণের বেশে নিজেদের হৃদয়ের আকুল আবেগ প্রকাশ করেছেন তাদের কবিতাগুলোতে। ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন ১৬৫ জন বৈষ্ণব কবির নাম জানিয়েছেন। তবে বৈষ্ণব কবিতার চার মহাকবি হলেন বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাস। বৈষ্ণব কবিরা সৌন্দর্য সচেতন। সেকালে তারা সৌন্দর্যের যে সূক্ষ্ম বর্ণনা দিয়েছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। আকুল করা আবেগে ভরপুর বৈষ্ণব কবিতাগুলো চণ্ডীদাসের একটি পদ উল্লেখযোগ্য :
সই কেবা শুনাইল শ্যাম নাম।
কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো
আকুল করিল মোর প্রাণ।
কবি জ্ঞানদাস সহজ-সরল আবেগ প্রকাশ করেন সহজ-সরল ভাষায়। কিন্তু ভাষার মধ্যে সঞ্চার করে দিয়েছেন প্রকৃত হৃদয়ের তীব্র চাপ। জ্ঞানদাসের একটি কবিতার কয়েক পংক্তি –
রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর।
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কাদে
পরান পিরিতি লাগি থির নাহি বান্ধে।
যেখানে রাধা রাখছে তার আলতা রাঙানো পা, সেখানেই যেনো রাধার পা থেকে ঝরে পড়ছে স্থলপদ্মের লাল পাপড়ি। এমন অনেক সুন্দর বর্ণনায় সমৃদ্ধ বৈষ্ণব কবিতা।
মধ্যযুগে মুসলমান কবিরা একটি নতুন পথের সন্ধান দিয়েছেন। তারাই প্রথমে শোনালেন শুধুমাত্র মানুষের গল্প-কাহিনী। তারা দেবতার পরিবর্তে মানুষের হৃদয়ের কথা, দুঃখ-বেদনা, হাসি-কান্নার কথা তাদের কাব্যে বর্ণনা করেছেন। এ সময়কার মুসলমান কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শাহ মুহম্মদ সগীর, বাহরাম খান, আফজল আলী প্রমুখ। এরা ষোড়শ শতকের কবি। সপ্তদশ শতাব্দীর বিখ্যাত কবি হলেন সৈয়দ সুলতান, আবদুল হাকিম, কাজী দৌলত, আলাওল। তারা সবাই মিলে বাংলা কবিতাকে অপূর্ব সৌন্দর্যদান করেছিলেন।
এর ফলে বাংলা সাহিত্য মধ্যযুগ থেকে হয়ে ওঠে হিন্দু-মুসলমান উভয়ের সম্পত্তি। তারা উভয়ে মিলে বুনে যেতে থাকেন কাব্যলক্ষ্মীর শাড়ির পাড়। এ সময়কার উল্লেখযোগ্য অবদান হলো ইউসুফ-জুলেখা, লায়লা-মজনু, নসিহতনামা, নূরনামা, কারবালা, শহরনামা, সতীময়না প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ। মধ্যযুগের মুসলমান কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন আলাওল। তার শ্রেষ্ঠ কাব্যের নাম ‘পদ্মাবতী’। উপমা, সৌন্দর্যে ও অলঙ্কারে ‘পদ্মাবতী’ বাংলা সাহিত্যের এক অনুপম সৃষ্টি।

মধ্যযুগের লোকসাহিত্য :
বাংলা সাহিত্য লোকসাহিত্যে যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একবার একে বাতাসের সাথে তুলনা করেছিলেন। বাতাস যেমন আমাদের ঘিরে আছে তেমনি আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে অজস্র লোকসাহিত্য। যে সাহিত্য লেখা হয়নি তালপাতার মূল্যবান গাত্রে, যে সাহিত্য পায়নি সমাজের উঁচুতলার লোকদের আদর, যে সাহিত্য পল্লীর সাধারণ মানুষের কথা বলেছে গানে গানে, যে সাহিত্যের রচয়িতার নামও অনেক সময় হারিয়ে গেছে তাকে বলা হয় লোকসাহিত্য।
এ সাহিত্য বেঁচে আছে শুধুমাত্র পল্লীর মানুষের ভালোবাসা ও স্মৃতিকে সম্বল করে। লোকসাহিত্য পল্লীর মানুষের বুকের বাঁশরী। লোকসাহিত্যের ভাণ্ডার অনেক বড়, অনেক বিশাল। ছড়া, গীতি, গীতিকা, ধাঁধাঁ, রূপকথা, উপকথা প্রভৃতিতে ভরপুর আমাদের লোকসাহিত্য। লোকসাহিত্য সংগ্রহের জন্যে যাদের নাম বিখ্যাত তাদের মধ্যে বিখ্যাত চন্দ্রকুমার দে। ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন প্রকাশ করেন ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’।
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার সংগ্রহ করেন রূপকথা—ঠাকুরমার ঝুলি, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর রূপকথা সংগ্রহের নাম ‘টুনটুনির বই’। লোকসাহিত্যের ঠাকুরদাদার ঝুলি। অন্যতম শাখা ছড়ার মধ্যে লুকিয়ে। গভীর ভাব ও ইতিহাস। যেমন—আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম বাজে’ কিংবা ‘ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে। এ ছড়াগুলো যথেষ্ট অর্থবহ। গীতিকা লোকসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মহুয়া, দেওয়ানা মদিনা, মলুয়া উল্লেখযোগ্য গীতিকা। গীতিকায় পাওয়া যায় পল্লীর গাছপালার মতো সবুজ চিরকালের নর-নারীর কামনা-বাসনার কাহিনী। বাংলার গীতিকাগুলোর সৌন্দর্য অশেষ। মধ্যযুগের কাহিনীগুলোর মধ্যে এগুলোই শ্রেষ্ঠ। মঙ্গলকাব্য এগুলোর পাশে খুবই ম্লান।
![অক্ষয়কুমার বড়াল, বাঙ্গালী লেখক [ Akshay Kumar Boral, Bengali Writer ]](https://banglagurukul.com/wp-content/uploads/2022/03/Akshay-Kumar-Boral-অক্ষয়কুমার-বড়াল-249x300.jpg)
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ :
মধ্যযুগের অবসানে আসে আধুনিক যুগ, ১৮০০ অব্দে। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্য ছিল সংকীর্ণ; সবগুলো শাখা বিকশিত হয়নি তাতে। উনিশ শতকে বিকশিত হয় সব শাখা। বাংলা সাহিত্য হয়ে ওঠে সম্পূর্ণ সাহিত্য। মানুষ এ সময়ে যুক্তিতে আস্থা আনে, আবেগকে নিয়ন্ত্রিত করে, মানুষকে মানুষ বলে মূল্য দেয়। এর প্রভাব পড়ে বাংলা সাহিত্যে। তাই বাংলা সাহিত্যও হয়ে ওঠে আধুনিক। আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় অবদান গদ্য। প্রাচীন বা মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে গদ্য বলতে বিশেষ কিছু না। তখন ছিল কেবল কবিতা বা পদ্য।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকরা সুপরিকল্পিতভাবে বিকাশ ঘটান বাংলা গদ্যের। তাদের প্রধান ছিলেন উইলিয়াম কেরি । তার সহায়ক ছিলেন রামরাম বসু। এ সময়ে গল্প, উপন্যাস, নাটক লেখা হয় গদ্যে। প্রবন্ধ গদ্য ছাড়া লেখাই যায় না। উনিশ শতকের প্রথম অর্ধেক কেটেছে সদ্যোজাত গদ্যের লালন পালনে। এ সময়ে বিভিন্ন লেখক নিজ নিজ ভঙ্গিতে গদ্য রচনা করেন এবং গদ্যসাহিত্যকে বিকশিত করেন। সে সময়ের যারা প্রধান গদ্যলেখক তারা হচ্ছেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাশঙ্কর তর্করত্ন, ভূদেব মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। গদ্যসাহিত্যে আসে বৈচিত্র্য; উপন্যাস দেখা দেয়, রচিত হয় গল্প, নাটক, প্রহসন, প্রবন্ধ প্রভৃতি।
বাংলা সাহিত্যে প্রথম উপন্যাস লেখেন প্যারীচাঁদ মিত্র, উপন্যাসের নাম ‘আলালের ঘরের দুলাল’। ব্যঙ্গবিদ্রূপে ভরা মজার কাহিনী লেখেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। মহাকাব্য রচনা করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। নাম ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। তিনি একাই বাংলা সাহিত্যকে অনেক পূর্ণাঙ্গতা দিয়ে গেছেন। তার হাতেই প্রথম রচিত হয় সনেট, ট্র্যাজেডি, প্রহসন। যথার্থ উপন্যাস সৃষ্টি করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। উপন্যাস ছাড়াও সমালোচনা, বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ এবং আরো অনেক রকম রচনার দ্বারা তিনি বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যান।
![অদ্বৈত মল্লবর্মণ, বাঙ্গালী লেখক [ Advaita Mallabarmana, Bengali Writer ]](https://banglagurukul.com/wp-content/uploads/2022/03/Advaita-Mallabarmana-অদ্বৈত-মল্লবর্মণ-252x300.jpg)
এরপরে আসেন দীনবন্ধু মিত্র, বিহারীলাল চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মীর মশাররফ হোসেন, কায়কোবাদ। তারপর আসেন মোহিতলাল মজুমদার, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরো অনেক প্রতিভা।
উনিশ শতকে রচিত হয় প্রবন্ধ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, আত্মজীবনী, নাটক, গল্প, সাহিত্য সমালোচনা, বিজ্ঞান ও দর্শন। প্রতিষ্ঠিত হয় দৈনিক সংবাদপত্র, সাহিত্য সাময়িকী। এ শতকে বাংলা সাহিত্য হয়ে ওঠে অভিনব সাহিত্য, মধ্যযুগে একশো বছরে যা রচিত হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি রচিত হয়েছে উনিশ শতকের একেকটি দশকে।
বিশ শতকে বাংলা সাহিত্য হয়ে ওঠে নতুন আলোয় উজ্জ্বল। কবিতা, উপন্যাস, গল্প, নাটক সব এলাকায়ই এ শতকে দেখা দেয় নতুন চেতনা, নতুন সৌন্দর্য। এ শতকে বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাহিত্যের প্রতিটি শাখাতেই তিনি বিচরণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ আমাদের শ্রেষ্ঠতম কবি, তিনি শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকও। ছোটগল্পেও তিনি শ্রেষ্ঠতম। এ শতকের দুজন অতুলনীয় গদ্যশিল্পী হলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রমথ চৌধুরী। চলিত রীতির প্রবক্তা হিসেবে প্রমথ চৌধুরী বিখ্যাত হয়ে আছেন। এ শতকে নাটকের ক্ষেত্রে খুব বড় প্রতিভা চোখে পড়ে না। রবীন্দ্রনাথ এ শতকের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার।
![অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাঙ্গালী লেখক Abanindranath Tagore, Bengali Writer ]](https://banglagurukul.com/wp-content/uploads/2022/03/Abanindranath-Tagore-অবনীন্দ্রনাথ-ঠাকুর-242x300.jpg)
১৯৪৭-এর দেশবিভাগের পর বাংলা সাহিত্যের বিষয় ও ভাবগত দিক থেকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধিত হয়। উপন্যাস, নাটক, গল্প ও কাব্যের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এ সময়কার উল্লেখযোগ্য ঔপন্যাসিক হলেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শওকত ওসমান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, শওকত আলী, হাসান হাফিজুর রহমান, রাজিয়া খান, সেলিনা হোসেন, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন প্রমুখ। এদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ সর্বাধিক জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য নাট্যকার হলেন আসকার ইবনে শাইখ নুরুল মোমেন, মুনীর চৌধুরী, সিকান্দর আবু জাফর, আ.ন.ম. বজলুর রশীদ, কল্যাণ মিত্র, মমতাজ উদ্দিন আহমদ, মামুনুর রশীদ, সেলিম আল দীন, আনিস চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ। এরা বাংলাদেশের নাট্যসাহিত্যকে বিভিন্ন দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশের কাব্যসাহিত্যে যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, সুফিয়া কামাল, সৈয়দ আলী আহসান, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, হাসান হাফিজুর রহমান, রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, বেলাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী প্রমুখ কবিগণ । কাব্য সাহিত্য বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে অনন্য গতিপ্রবাহ।

উপসংহার :
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সুদীর্ঘ কালের। হাজার বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে এর সাহিত্যভাণ্ডার। আমরা একবিংশ শতকের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। এ শতকে সাহিত্য ক্ষেত্রে দেখা দেবে নতুন চেতনা। তা হয়তো বহুবর্ণের দীপাবলী আর আকাশের রংধনুর সাতরং হয়ে দেখা দেবে একুশ শতকের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় দশকে। চিরকাল জ্বলবে বাংলা সাহিত্যের লাল নীল দীপাবলী। আমরা সবাই আগামী দিনের সাহিত্য সাধকদের আগমন প্রত্যাশা করে বসে আছি। সেসব অনাগত সাহিত্য সাধকদের কোমল হাতের ছোঁয়ায় বাংলা সাহিত্য অমরত্ব লাভ করবে এটাই আমাদের কাম্য।
আরও পড়ুন:
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ক বিস্তারিত ভিডিওতে জানতে দেখুন আমাদের নিচের ভিডিওগুলো বা বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস প্লেলিষ্ট।