আজ আমাদের প্রবন্ধ রচনার বিষয় – বাংলা অনুবাদ সাহিত্য, বা অনুবাদ সাহিত্য, বা বাংলা সাহিত্য ও অনুবাদ, বা অনুবাদ সাহিত্যের বিকাশ, বা বাংলা সাহিত্যে অনুবাদের ভূমিকা। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি। আপনারা চর্চা করে নিজের মতো করে লিখুন।
Table of Contents
বাংলা অনুবাদ সাহিত্য:
ভূমিকা:
কোনো ভাষা কেবল মৌলিক সাহিত্যে সমৃদ্ধ হতে পারে না। যে ভাষা যত ধনী, তার অনুবাদ সাহিত্যও ততো ধনী। আমাদের ভাষায় যা নেই তা হয়ত অন্য কোনো বিদেশী ভাষায় আছে। তাই আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে ঋদ্ধ করার জন্য আমরা অপর ভাষা থেকে অনুবাদ করি। সময় বিশ্বসাহিত্যের মধ্যে যে আন্তঃযোগাযোগ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে সাহিত্যের ভাষান্তরের কারণে। পৃথিবীর কোনো সাহিত্য অনুবাদ ছাড়া শ্রেষ্ঠত্বে পৌঁছতে পারে না। তাই যুগের ভাষা ও সাহিত্য সমৃদ্ধ যুগোপযোগী করার জন্য অনুবাদ একান্ত জরুরি। সুতরাং বলা যায় যে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রচনামাত্রই অনুবাদের মুখাপেক্ষী।
অনুবাদ সাহিত্যের সূচনা ও এর বিকাশ:
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বিভিন্ন অনুবাদক কবিরা অনুবাদে হাত দিয়েছিলেন। তারা অনুবাদের আশ্চর্য ফসল ফলিয়েছিলেন। হিন্দু কবিরা সাধারণত অনুবাদ করেছেন তাদের পুরাণ কাহিনীগুলো অর্থাৎ রামায়ণ ও মহাভারত থেকে। একই সাথে মুসলমান কবিরা অনুবাদ করেছিলেন আরবি, ফারসি, হিন্দি থেকে সংখ্যক রোমান্টিক ও রোমাঞ্চকর উপাখ্যান।
রামায়ণ মহাভারত অনুবাদ করা সহজ কথা ছিলো না। কারণ সংস্কৃতানুসারী সমাজের যারা মাথা ছিলেন তারা বাংলা ভাষায় এসব অনুবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন। কেননা তারা মনে করতেন সংস্কৃত থেকে ওসব পুণ্যগ্রন্থ বাংলায় অনূদিত হলে ধর্মের মর্যাদাহানি ঘটবে। একইভাবে ইংরেজিতে বাইবেলের অনুবাদ করতে গিয়ে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন অনুবাদকরা। জার্মান ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেছিলেন মার্টিন লুথার। বাংলা ভাষায় কোরআন অনুবাদ করতে গিয়েও কম বাঁধা আসেনি। কিন্তু বিভিন্ন কবি অনুবাদকরা সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বড় ঝুঁকি নিয়ে অনুবাদ করে গিয়েছেন। আবার অনেকেই তাদেরকে অনুবাদে অনুপ্রেরণাও যুগিয়েছেন।
বাংলা সাহিত্যে হিন্দু কবিদের অনুবাদের প্রেরণায় মুসলিম সম্রাট:
মধ্যযুগে অনুবাদ সাহিত্যে বিশেষ করে রামায়ণ ও মহাভারত থেকে হিন্দু কবি ও অনুবাদকদের অনুবাদের জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তখনকার মুসলমান সম্রাট ও রাজারা। তাদের উৎসাহ অনুপ্রেরণাতেই বাংলা ভাষায় রামায়ণ, মহাভারত অনূদিত হতে পেরেছিলো। এতে করে হিন্দু কবিরা সম্রাটদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। রামায়ণ মহাভারত শুধু ধর্মগ্রন্থ নয়। এ দুটি বইয়ে রয়েছে নানা মনোহর কাহিনী। কাহিনীর মনোহারিত্বে মুগ্ধ হয়েছিলেন মুসলমান রাজারা। রামায়ণ, মহাভারতের দুজন অনুবাদক প্রায় দেবতার মর্যাদা লাভ করেছেন। তারা হচ্ছেন রামায়ণের অনুবাদক কবি কৃত্তিবাস এবং মহাভারতের অনুবাদক কবি কাশীরাম দাস।
মধ্যযুগের কোনো অনুবাদই মূল রচনার হুবহু অনুবাদ নয়। কাহিনী ঠিক রেখে কবিরা নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে নতুন করে রচনা করেছেন। ফলে তাদের অনুবাদ হয়ে উঠেছে নতুন অনুপম সাহিত্য। যেমন— কাশীরামের বিখ্যাত স্তবকটি শুনে সবাই মুগ্ধ হয়।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।
১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গৌড়ের রাজা ছিলেন নাসির বী। তার অনুপ্রেরণায় মহাভারতের একটি অনুবাদ হয়েছিল। কৃত্তিবাস অনুবাদ করেছিলেন রামায়ণ। তাকে প্রেরণা, উৎসাহ ও সাহায্য দিয়েছিলেন রুকনুদ্দিন বারবক শাহ (১৪৫৯-৭৪)। পরাগল খান কবীন্দ্র পরমেশ্বর নামক এক কবিকে দিয়ে অনুবাদ করেছিলেন মহাভারতের অনেকখানি। পরাগল খানের পুত্র ছুটি খান-এর সাহায্য ও অনুপ্রেরণায় শ্রীকর নন্দী অনুবাদ করেছিলেন মহাভারতের আরো অনেকখানি। এভাবে আরো অনেক মুঘল রাজা যেমন হুসেন শাহ রামায়ণ, মহাভারত অনুবাদে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন।
রামায়ণের প্রথম অনুবাদকই শ্রেষ্ঠ অনুবাদক —–—তিনি হলেন কৃত্তিবাস। কিন্তু মহাভারতের অনেক অনুবাদক রয়েছেন। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন কাশীরাম দাস। রামায়ণের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অনুবাদকরা হলেন চন্দ্রাবতী, ভবানীদাস, জগহ্রাম রায়, রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামানন্দ ঘোষ, দ্বিজ মধুকন্ঠ, কবিচন্দ্র। অনুরূপে মহাভারতের উল্লেখযোগ্য অন্যান্য অনুবাদকরা হলেন নিত্যানন্দ ঘোষ, রামেশ্বর নন্দী, রাজীবসেন, সঞ্জয়, রামনারায়ণ দত্ত প্রমুখ।
মালাধর বসু অনুবাদ করেছিলেন ভাগবত। তিনিও একজন মুসলমান রাজার প্রেরণায় ভাগবত অনুবাদ করেছিলেন। রাজা তাকে গুণরাজ খান উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। বাংলা রামায়ণ মানে কৃত্তিবাসের রামায়ণ। রাম সীতার বেদনার কথা কৃত্তিবাস পয়ারের চৌদ্দ অক্ষরের মালায় গেঁথে বাঙালির কণ্ঠে পরিয়ে গেছেন। রামায়ণ বাংলা সাহিত্য সম্পদে পরিণত হয়েছে কৃত্তিবাসের হাতে। রাম সীতা এবং আর সবাই হয়ে পড়েছে কোমল কাতর বাঙালি। অসাধারণ কবিপ্রতিভা ছিল কৃত্তিবাসের। উনিশ শতকের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কৃত্তিবাসকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, কৃত্তিবাস— কীর্তিবাস কবি।
কাশীরাম দাসও ছিলেন এক মহাকবি। তিনি জন্মেছিলেন কবি পরিবারে। তিনি কিন্তু মহাভারত পুরোপুরি অনুবাদ করে যেতে পারেননি। এ সম্বন্ধে একটি শ্লোক উল্লেখ করা যেতে পারে :
আদি সভা বন বিরাটের কতদূর।
ইহা রচি কাশীদাস গেলা স্বর্গপুর।
ধন্য হইল কায়স্থ কুলেতে কাশীদাস।
তিন পর্ব ভারত সে করিল প্রকাশ।
তার মৃত্যুর পর তার ভ্রাতুষ্পুত্র এবং আরো কয়েকজন মিলে মহাভারতের অনুবাদ সম্পূর্ণ করেন। কাশীরাম দাসের মহাভারত হয়ে উঠেছে বাঙালির মহাভারত এবং পরিণত হয়েছে বাংলা সাধারণ সম্পত্তিতে।
রামায়ণ, মহাভারতের সাথে সাথে আরবি ও ফারসি ভাষা থেকে অনূদিত হয়েছে বিপুল সংখ্যক রোমান্টিক প্রণয়-উপাখ্যান। লায়লা-মজনু, পদ্মাবতী, লোরচন্দ্রানী, মধুমালতী এসব প্রণয়গীথা আরবী ফারসি থেকে উৎসারিত। যেমন, শাহ মুহম্মদ সগীর-এর ইউসুফ-জুলেখা, বাহরাম খানের লায়লা মজনু। অনুরূপে মহম্মদ কবির লিখেছেন– মনোহর মধুমালতী। সাবিরিদ খান ও মহাকবি আলাওল অনুবাদ করেন এবং লিখেন পদ্মাবতী, সয়ফুলমূলক বদিউজ্জামাল। পদ্মাবতী বিখ্যাত হিন্দি কবি মালিক মুহম্মদ জায়সির ‘পদুমাবত’-এর কাব্যানুবাদ। আলাওলের একটি উল্লেখযোগ্য কাব্য সেকদারনামা-এর মূল কবি নিজামি। তবে আলাওলের অসাধারণ কাব্যপ্রতিভা বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। পদ্মাবতীর রূপ বর্ণনা সম্পর্কে আলাওলের বর্ণনা নিম্নরূপ:
পদ্মাবতী রূপ কি কহিমু মহারাজ।
তুলনা দিবারে নাহি ত্রিভুবন মাঝ
স্বর্গ হতে আসিতে যাইতে মনোরথ
সৃজিল অরণ্য মাঝে মহাসূক্ষ্ম পথ।
কবি পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনার এক পর্যায়ে তার সিথির বর্ণনায় বলেছেন তার সিঁথি খুব সরু, সুন্দর, তীক্ষ্ণ। এমনকি তরবারির তীক্ষ্ণতার চেয়েও অধিকতর তীক্ষ্ণ পদ্মাবতীর সিথি। তারপর কবি একটি উপমা দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন সে সিঁথির সৌন্দর্য। বলেছেন—ওই সিঁথির রেখাকে মনে হয় যেনো কালো মেঘের মধ্যে স্থির হয়ে আছে বিদ্যুত্থরেখা। এতেও কবির মন ভরেনি। তিনি দিয়েছেন আরো উপমা। বলেন, স্বর্গ থেকে আসা-যাওয়ার জন্য সৌন্দর্যের দেবতা অরণ্যের মধ্যে এক সূক্ষ্মপথ নির্মাণ করেছিলেন। পদ্মাবতীর সিঁথি তেমনি সুন্দর নয়নাভিরাম। মধ্যযুগের এক বিরাট অংশ ছিল অনুবাদ সাহিত্য।
অনুবাদ সাহিত্যে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান :
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপিত হয়। এ সময় উইলিয়াম কেরী বাংলা সাহিত্যে ব্যাপক অবদান রাখেন। এ সময় অনুবাদের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। গদ্যে, পদ্যে শ্রেষ্ঠ রচনার কাজ শুরু হয় এ সময় থেকেই। ১৮০২ মতান্তরে ১৮০৩ সালে সর্বপ্রথম মুদ্রিত হয় কৃত্তিবাসের রামায়ণ। এটি ছাপেন শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান পাদ্রীরা। এ সময় রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর হিতোপদেশ, বৃতসংহার, ভ্রান্তিবিলাস এসব রচনা অনুবাদের ফসল। পরবর্তী আধুনিকেরা সেই অনুবাদের ধারা আরো প্রসারিত করেছেন। যার ফলে বিশ্বের ক্লাসিক সাহিত্যের সাথে বাঙালি পাঠকের পরিচয় ও পরিণয় ঘটেছে।
আধুনিক অনুবাদ সাহিত্যের বিকাশ :
মধ্যযুগের অনুবাদ সাহিত্যের পথ ধরে অনুবাদ সাহিত্য আধুনিকতার পথ খুঁজে পায়। বুদ্ধদেব বসু মেঘদূত অনুবাদের ভূমিকায় লিখেছিলেন, “দেশ কালের দূরত্ব মোচনের কয়েকটি উপায় আমাদের জানা আছে।” তার মধ্যে অনুবাদ একদিক থেকে সবচেয়ে কার্যকরী। লেখক ও তার ভাষা যখন প্রাচীন, তখন তাকে সমকালীন জীবনের মধ্যে সংকলিত করার কাজটি অনুবাদকের বলে স্বীকার্য পণ্ডিতের নয়। অনেকেই মূল রচনা পড়তে পারেন না, তাই অনুবাদের প্রয়োজন। এক সময় এক একটি অনুবাদ বা অনুবাদগুচ্ছ এক এক দেশের বা মহাদেশের সাহিত্যের ধারা বদলে দিয়েছে। এছাড়া ভালো অনুবাদ শুধু মূল রচনার প্রতিনিধিত্বই করে না, তার যুগের ও অনুবাদের ব্যক্তিত্বেরও স্বাদ দেয়।
আধুনিক অনুবাদ সাহিত্যের দুটি ধারা লক্ষ্যণীয়। একটি আক্ষরিক অনুবাদ, আরেকটি ভাবানুবাদ। আক্ষরিক অনুবাদ মৌলিক রচনার আস্বাদ এনে দিতে পারে না। এটি কৃত্রিম হয়ে পড়ে। কিন্তু ভাবানুবাদ পাঠকচিত্তে একটি বাণী পৌঁছে দেয়। এক্ষেত্রে অনুবাদকের ভাষাজ্ঞান, প্রজ্ঞা, সততা, নিষ্ঠা থাকা চাই। অনেক মহৎ রচনা অনূদিত হয়ে তার মৌলিকত্ব হারিয়ে ফেলে। আবার অনেক মৌলিক রচনা অনূদিত হয়ে প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে। তবুও অনুবাদ ছাড়া বিশ্বের অপরাপর ভাষা সাহিত্য ও চিন্তন-মননশীলতার সাথে পরিচিত হওয়া যায় না।
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক পর্বের একজন সফল অনুবাদক হলেন বুদ্ধদেব বসু। রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম এর অনুবাদের সংখ্যা দশের অধিক। কান্তিচন্দ্র দেবের আক্ষরিক অনুবাদ বিশেষ পরিচিত। এক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলাম সফল অনুবাদক। রুবাইয়াতের ভাষাভঙ্গি, ছন্দ, প্রকরণ যথার্থ বাণী ধারণ করেছে। নজরুলের অনুবাদে। সামগ্রিকভাবে নজরুল ইসলামের অনুবাদের সাফল্য বিস্ময়কর। তিনি আধুনিক বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের শীর্ষ স্পর্শ করেছেন। বাংলা সাহিত্যে বর্তমানে অনুবাদের আরো ব্যাপক বিস্তৃতি আবশ্যক অন্যথায় বিশ্বের সাথে তথ্য, তত্ত্ব ও সৃজনশীলতার দূরত্ব বৃহৎ হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশে অনেকগুলো অনূদিত নাটক প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে নাট্যকার সৈয়দ আলী আহসান কর্তৃক অনূদিত নাটক ‘ইডিপাস’। মূল রচমা গ্রীক নাট্যকার সাফোক্লিসের ইডিপাস রেক্স’। আব্দুর রশীদ অনুবাদ করেছেন সফোক্লিসের ‘অ্যান্টিগোনি’। প্রখ্যাত নাট্যকার কবীর চৌধুরীর ‘শত্রু’ ইবসেনের The enemy of the people এর অনুবাদ। সম্রাট জেনিমডেসিন’ ও নীলের নাটকের অনুবাদ। ‘অচেনা’ জিবি প্রিসলির Dangerous cormer নাটকের অনুবাদ।
জর্জ বার্নাড শ’র You never can tell’ নাটকের সরল অনুবাদ করেন নাট্যকার মুনীর চৌধুরী। নাম দেন ‘কেউ কিছু বলতে পারে না। তিনি শেক্সপীয়রের The Taming of the shrew নাটকের অনুবাদ করেন ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ নামে। ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের পাঁচটি নাটকের বাংলায় অনুবাদ করেন শওকত ওসমান।
এগুলো হলো ‘নিম হাকিম, ‘প্রেম মহৌষধ’, ‘ভৃত্যযোগ’, ‘ভাওতারভুক’ ও ‘নবদ্বেষী। সিরাজুল ইসলাম অনুবাদ করেছেন ইবসেনের নাটক *Wild Duck’। নাম দেন ‘বুনোহাঁস’। ইবসেনের আরো কয়েকটি নাটকের অনুবাদ যেমন—A Dolls House এর অনুবাদ ‘পুতুলের সংসার’, ‘Ghost’-এর অনুবাদ ‘প্রেতাত্মা’। Rosmersholm নাটকের অনুবাদ ‘রসমার্স হোম’—এগুলো অনুবাদ করেন প্রখ্যাত অনুবাদক ও নাট্যকার আব্দুল হক।
বাংলা সাহিত্যে আরো কতিপয় অনূদিত নাটক রয়েছে যেমন–শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’, ‘ম্যাকবেথ’ ইত্যাদি। শাহাবুদ্দিন আহমদের ‘তিন বোন’, আসকার ইবনে শাইখের ‘যন্ত্রণার ছাপ’, ফতেহ লোহানীর ‘একটি সামান্য মৃত্যু’ ও ‘চিরন্তন হাসি’, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ‘জঘুমান’, আবু রশীদের ‘দরবেশ’, ‘ছায়াহীন কায়া’ মুস্তাফিজুর রহমানের ‘ওরা নিচে থাকে’, আবদুস সাত্তারের ‘আধুনিক আরবী নাটক’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য অনুবাদ।
যেহেতু বাংলা সাহিত্যে নাটক তেমন সমৃদ্ধ নয়, সেহেতু বিদেশী নাটক অনুকরণে কিংবা অনুবাদ করে বাংলা নাট্যসাহিত্যের কিছুটা হলেও শ্রীবৃদ্ধি করা যায়। এরূপ উপন্যাসের ক্ষেত্রেও অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিদেশী উপন্যাস অবলম্বন কিংবা অনুবাদ করে বর্তমান আধুনিক উপন্যাসের ধারা পাল্টানো যেতে পারে এবং এর শ্রীবৃদ্ধি ঘটানো যেতে পারে। একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসে বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের আবেদন বাড়ছে বই কমছে না। এর জন্য বাংলা সাহিত্যে দক্ষ ও আন্তরিক অনুবাদকের খুবই প্রয়োজন।
উপসংহার :
অনুবাদ সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের অমর কীর্তি। বাংলা সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশলগ্নে অনুবাদ সাহিত্যই সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে। প্রাচীন কিংবা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মৌলিক রচনা খুব কমই অনুবাদ সাহিত্যই তখন বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তখন কবি ও অনুবাদকরা অনুবাদ না করলে হয়ত আমরা বাংলা সাহিত্যের মনোহর রূপ দেখতে পেতাম না। কেননা এ অনুবাদ বাংলা সাহিত্যকে নতুন রূপে রূপায়িত করেছে। বাংলা সাহিত্যচর্চার দিগন্ত প্রসারিত করেছে এ অনুবাদ সাহিত্য। সুতরাং বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে অনুবাদ সাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরও দেখুন: