জয় গোস্বামী এর জন্ম ১০ নভেম্বর ১০, ১৯৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসায়, তাঁর স্থায়ী নিবাস হয়ে উঠে সেখানে। তাঁর পিতার নাম মধু গোস্বামী, তিনি ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তাঁর মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন। জয় গোস্বামীর লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণীতে । তিনি বাংলা ভাষার একজন সুনামধন্য প্রখ্যাত আধুনিক কবি। পশ্চিমবঙ্গবাসী ভারতীয় এই কবি উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালিকবি হিসাবে পরিচিত ।
জয় গোস্বামী প্রথম কবিতা লিখেছিলেন যখন তার বয়স ১৩-১৪ বছর বয়সে। নিয়মিত কবিতা লিখা শুরু করেন যখন তার ১৬-১৭ বছর বয়সে। তার প্রথম কবিতার বই ‘ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’ যা প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০০০ সালের আগস্ট মাসে তিনি পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
Table of Contents
কবি জয় গোস্বামী এর কবিতা:
শিরচ্ছেদ, এখানে, বিষয় – জয় গোস্বামী
শিরচ্ছেদ, এখানে, বিষয়।
মাটি তাই নরম, কোপানো।
সমস্ত প্রমাণ শুষছে ভয়
কখনো বোলো না কাউকে কী জানো, বা, কতদূর জানো।
শিল্প – জয় গোস্বামী
জমি কেড়ে নেওটাই কাজ
ঘর ছাড়া করাটাই কাজ
আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে
তাড়াও, তারপর তৈরি করো
আমাদেরই বুকের উপরে
উঁচু শিল্প, উদ্ধত সমাজ |
সঙ্গে কিন্তু পুলিশকেও চাই
নাহলে কি করে ছলে ব’লে
আমার হাড়গোড় ভাঙবে, ভাই!
গণতন্ত্র আজ থেকে এটাই
গণতন্ত্র আজ থেকে এটাই |
সৎকার গাথা – জয় গোস্বামী
আমরা যেদিন আগুনের নদী থেকে
তুলে আনলাম মা’র ভেসে-যাওয়া দেহ
সারা গা জ্বলছে, বোন তোর মনে আছে
প্রতিবেশীদের চোখে ছিল সন্দেহ
দীর্ঘ চঞ্চু, রোঁয়া-ওঠা ঘাড় তুলে
এগিয়ে এসেছে অভিজ্ঞ মোড়লেরা
বলেছে, এ সভা বিধান দিচ্ছে শোনো
দাহ করবার অধিকারী নয় এরা
সেই রাত্রেই পালিয়েছি গ্রাম ছেড়ে
কাঁধে মা’র দেহ, উপরে জ্বলছে চাঁদ
পথে পড়েছিল বিষাক্ত জলাভূমি
পথে পড়েছিল চুন লবণের খাদ
আমার আঙুল খসে গেছে, তোর বুক
শুকিয়ে গিয়েছে তীব্র চুনের ঝাঁঝে
আহার ছিল না, শৌচ ছিল না কারো
আমরা ছিলাম শববহনের কাজে
যে দেশে এলাম,মরা গাছ চারিদিকে
ডাল থেকে ঝোলে মৃতপশুদের ছাল
পৃথিবীর শেষ নদীর কিনারে এসে
নামিয়েছি আজ জননীর কংকাল
বোন তোকে বলি, এ অস্থি পোড়াবো না
গাছের কোটরে রেখে যাবো এই হাড়
আমরা শিখি নি । পরে যারা আছে তারা
তারা শিখবে না এর ঠিক ব্যবহার?
সারা গায়ে আজ ছত্রাক আমাদের
চোখ নেই, শুধু কোটর জ্বলছে ক্ষোভে
আমি ভুলে গেছি পুরুষ ছিলাম কিনা
তোর মনে নেই ঋতু থেমে গেছে কবে
পূবদিকে সাদা করোটি রঙের আলো
পিছনে নামছে সন্ধ্যার মতো ঘোর
পৃথিবীর শেষ শ্মশানের মাঝখানে
বসে আছি শুধু দুই মৃতদেহ চোর।
সমুদ্র তো বুড়ো হয়েছেন – জয় গোস্বামী
সমুদ্র তো বুড়ো হয়েছেন
পিঠের ওপরে কতো ভারী দ্বীপ ও পাহাড়
অভিযাত্রী, তোমার নৌকাই
খেলনার প্রায়
সংকোচ কোরো না তুমি, ওইটুকু ভার
অনায়াসে সমুদ্রকে দিয়ে দেওয়া যায়!
সমুদ্র? না প্রাচীন ময়াল? – জয় গোস্বামী
সমুদ্র? না প্রাচীন ময়াল? পৃথিবী বেষ্টন করে
শুয়ে আছে।
তার খোলা মুখের বিবরে
অন্ধকার। জলের গর্জন।
ঐ পথে
সমস্ত প্রাণীজগৎ নিজের অজান্তে গিয়ে ঢোকে
তুমি ওই বনের সীমায়
গাছে পিঠ রেখে বসে প্রাণত্যাগ করার মুহূর্তে
চোখ স্থির করছো সেই ময়ালের জ্বলজ্বলে চোখে
এতদিন পর
দেখছো সে আসলে অন্ধ। চোখ দুটো নুড়ির, শুধু
জ্যোৎস্না লেগে ঝকমক করে
দেখছো যে স্রোতের ওই গর্জন আসলে এক
জিভকাটা স্বর
দেখছো, তার মুখের গহ্বর
সীমাহীন কালো–কিন্তু দুটো একটা তারা ভেসে আসে
সমুদ্রে পা ডুবিয়ে ছপছপ – জয় গোস্বামী
সমুদ্রে পা ডুবিয়ে ছপছপ
যে-ধীবর হাঁটে
মাথার টোকাটি উল্টে ধ’রে
যে পায় টুপটাপ উল্কা। চাঁদ
সমুদ্রের ছাদ ফুটো ক’রে
একটি ঊষায় তার মাথাটি আগুন লেগে ফাটে
তোমার ধৈর্য্যের ভাঙে বাঁধ
আবার শতাব্দীকাল পরে
রক্ত চলতে শুরু করে আমার ডানার শক্ত কাঠে…
সিদ্ধি, জবাকুসুম সংকাশ – জয় গোস্বামী
সিদ্ধি, জবাকুসুম সংকাশ
মাথার পিছনে ফেটে পড়ে
দপ করে জ্বলে পূর্বাকাশ
(…?) মাথায় রক্ত চড়ে
সিদ্ধি, মহাদ্যুতি–তার মুখে
চূর্ণ হয় যশের হাড়মাস
হোমাগ্নিপ্রণীত দুটি হাত
আমাতে সংযুক্ত হয়, বলে:
বল তুই এই জলেস্থানে
কী চাস? কেমনভাবে চাস?
আমি নিরুত্তর থেকে দেখি
সূর্য ফেটে পড়ে পূর্ণ ছাই
ছাই ঘুরতে ঘুরতে পুনঃপুন
এক সূর্য সহস্র জন্মায়
সূর্যে সূর্যে আমি দেখতে পাই
ক্ষণমাত্র লেখনী থামছে না
গণেশ, আমার সামনে বসে
লিপিবদ্ধ করছেন আকাশ
চক্রের পিছনে চক্রাকার
ফুটে উঠছে ব্রহ্মাজগৎ
এ দৃশ্যের বিবরণকালে
হে শব্দ, ব্রহ্মের মুখ, আমি
শরীরে আলোর গতি পাই
তোমাকেও এপার ওপার
ভেদ করি, ফুঁড়ে চলে যাই…
সেই কবিতাটা — জয় গোস্বামী
সেই কবিতাটা বজ্জাত।
সংশোধন করার জন্যে যেই না কবিতাটার একটা জায়গা কেটেছি, অমনি সেই ফাঁক
দিয়ে একটা গাছ ডাল বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
‘কী রে, আম কুড়োতে যাবি না?’
আর একটা জায়গা কাটতেই সেখান
থেকে একটা মেয়ে মুখ বার করে বলল,
‘আমি কিন্তু কিছু জানি না! বিকেলে আমি জামা কিনতে যাবো ই যাবো!’
আমি ভয় পেয়ে গিয়ে একটা স্পেস দিলাম।
কোনোমতে কয়েক চরণ এগোতে-না-এগোতেই
দেখি আমাকে কিছু না জানিয়েই নিচের স্তবক থেকে ওপরের স্ট্যাঞ্জায়
লতিয়ে উঠেছে লাউলতা পুঁইলতা মাধবীলতা-ও।
ওপরের থেকে ঝরে পড়ছে ঝুপ ঝুপ সাদা লেবু ফুল, গন্ধে মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি নিচের স্তবকের ও দুটো শব্দ কাটতেই
সেখানে একটা জানলা ফুটে গেল।
জানলার বাইরে মাঠ আর মেঘ ফুটল।
মেঘে ফুটে গেল তারা।
এদিকে, বুকুনের জন্যে আনা তুলোর তৈরী তিনটে ভালুক ছানা জ্যান্ত হয়ে জানলা দিয়ে নেমে চলে যেতে থাকল মাঠের দিকে,
এই রে। এক্ষুনি তো বুকুন ওদের খুঁজে না পেয়ে মহা অনর্থ করবে!
ভয় পেয়ে আমি কারেকশন বন্ধ করে কবিতাটা
যেমনকে তেমনই রেখে দিলাম টেবিলে।
রেখে স্নান করতে গেলাম।
এসে দেখি ততক্ষণে ভালুকছানারা ফিরে এসে,
কবিতাটার মধ্যে একটা কাঠের বাড়ি বানাতে শুরু করেছে।
মেয়েটা নতুন জামা পরে দৌড়চ্ছে আমগাছতলায়।
আর কবিতাটার একদিকে একটা মাটির দাওয়া বেরিয়ে এসেছে,
সেখানে তিন ছেলেকে ভাত দিচ্ছেন মা, আর
বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে গেছে ভাঙ্গা পাঁচিল,
পোড়ো বাগান-
সেখান থেকে এগিয়ে আসা লেবু ফুল আর
ঝুমকো ফুল,
লাউলতা আর মাধবীলতা, কাঁটাবন আর
গোলাপবন,
আরো কী কী সব নাম না জানা গাছপাতায়
কবিতাটা আড়াল হয়ে গেছে একেবারে …
তা যাক গে। সেই বজ্জাত
কবিতাটা তো আর আমি
আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি না!
সোজা কথা — জয় গোস্বামী
গুলি লেগে পড়ে গেল ।
তুলে ধরতে যাচ্ছে তার বউ ।
বন্দুক উঁচিয়ে ধরো ।
বলো— ‘না, তুলবি না—’
বলো— ‘যা সরে যা বলছি—’ তাও
যদি না শোনে তাহলে
স্বামীর সাহায্যকারী হাতদুটোয়
সোজা গুলি করো ।
যে-নারী ধর্ষণ করতে বাধা দিচ্ছে তার
যৌনাঙ্গে লাঠির মাথা সোজা ভরে দাও
যন্ত্রণায় সে যখন দয়া চায়, গালাগালি করে
তার সামনে তার শিশুটিকে দু’পা ধরে
দুই দিকে টানো,
টানো,
যতক্ষণ না সোজাসুজি ছিঁড়ে যাচ্ছে
টানো!
একে বলে সোজা কথা ।
এরই নাম ক্ষমতা দেখানো!
স্তুপের তলায় রাখো ঘাসলতাপাতা — জয় গোস্বামী
স্তুপের তলায় রাখো ঘাসলতাপাতা
এনেছি বলির পশু, ছাগ
সে ভুলে গিয়েছে তার গত শিরচ্ছেদ
অথচ গলায় তার
এখনো মালার মতো দাগ
স্নান — জয় গোস্বামী
সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই।
তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি।
এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার –
আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে …
জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো।
তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে ব’লে যে-প্রেমিক
ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যে বাগদান
হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে।
আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি
ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি
আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল
অক্ষত রেখেছো ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার?
শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে
এখনো গোপন ক’রে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা;
সমস্ত যৌবন ধ’রে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা
দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে,
জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোস্নার ধারণা দেব ব’লে
এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি।
দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালো সংকেত –
যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে;
সে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে
তাকে অন্ধ করো, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার…
পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি
সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে
উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছো প্রকাশ্য ঝর্ণায়।
স্নান করে উঠে কতক্ষণ — জয় গোস্বামী
স্নান করে উঠে কতক্ষণ
ঘাটে বসে আছে এক উন্মাদ মহিলা
মন্দিরের পিছনে পুরনো
বটগাছ। ঝুরি।
ফাটধরা রোয়াকে কুকুর।
অনেক বছর আগে রথের বিকেলে
নৌকো থেকে ঝাঁপ দিয়ে আর ওঠেনি যে-দস্যি ছেলেটা
এতক্ষণে, জল থেকে
সে ওঠে, দৌড় মারে, ঝুরি ধরে খুব দোল খায়
সারা গা শ্যাওলায় ভরা, একটা চোখ মাছে খেয়ে গেছে
কেউ তাকে দেখতে পায় না, মন্দিরের মহাদেবও ঢুলছে গাঁজা খেয়ে
সেই ফাঁকে, এরকম দুপুরবেলায়–
সে এসে মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা ক’রে যায়।
স্পর্শ – জয় গোস্বামী
এতই অসাড় আমি, চুম্বনও বুঝিনি ।
মনে মনে দিয়েছিলে, তাও তো সে না-বোঝার নয়-
ঘরে কত লোক ছিল, তাই ঋণ স্বীকার করিনি ।
ভয়, যদি কোন ক্ষতি হয় ।
কী হয়? কী হতে পারতো? এসবে কী কিছু এসে যায়?
চোখে চোখ পড়ামাত্র ছোঁয়া লাগলো চোখের পাতায়-
সেই তো যথেষ্ট স্বর্গ- সেই স্পর্শ ভাবি আজ; সেই যে অবাক করা গলা
অন্ধকারে তাও ফিরে আসে…
স্বর্গ থেকে আরো স্বর্গে উড়ে যাও আর্ত রিনিঝিনি
প্রথমে বুঝিনি, কিন্তু আজ বলো, দশক শতক ধ’রে ধ’রে
ঘরে পথে লোকালয়ে স্রোতে জনস্রোতে আমাকে কি
একাই খুঁজেছো তুমি? আমি বুঝি তোমাকে খুঁজিনি?
স্বপ্নে মরা ময়ূর – জয় গোস্বামী
স্বপ্নে মরা ময়ূর, তার
গায়ে চাঁদের আলো
কার্নিশের ফণীমনসা
ছাদের কোণে ঘর
কাঁটায় বেঁধা কতকালের
শুকোনো সব পাখি
ওদের গলায় ফিসফিসোয়
বাতাস, ডাক, স্বর
মরা ময়ূর দাঁড়িয়ে–গায়ে
ফুটফুট জোনাকি
শিকল গেঁথে ঝোলানো চাঁদ,
পেণ্ডুলাম, কালো
হেলানো গাছ, গলতে থাকা
ইটকাঠের বাড়ি
স্বপ্নে মরা ময়ূর, তার
স্পষ্ট চোখ, খোলা
স্বেচ্ছা – জয় গোস্বামী
ওরা তো জমি দিয়েছে স্বেচ্ছায়
ওরাতো ঘর ছেড়েছে স্বেচ্ছায়
লাঠির নিচে ওরা তো স্বেচ্ছায়
পেতেছে পিঠ, নীচু করেছে মাথা
তোমরা কেন দেখতে পাও না তা
দেখেছি, সবই দেখেছি স্বেচ্ছায়
বাধ্য হয়ে দেখেছি স্বেচ্ছায়
মানব অধিকারের শবদেহ
বানের জলে দেখেছি ভেসে যায়
রাজ-আদেশে হাতকড়া-পড়ানো
রক্তঝরা গণতন্ত্রটিকে
প্রহরীদল হাঁটিয়ে নিয়ে যায়
প্রহরীদল মশানে নিয়ে যায়
আমরা সব দাঁড়িয়ে রাজপথে
দেখেছি, শুধু দেখেছি — স্বেচ্ছায়
হিংসার উপরে কালো ঘাস – জয় গোস্বামী
হিংসার উপরে কালো ঘাস
নীচে হাড়, মাটি জমা খুলি
কারোর জানার কথা নয়
মালসার মতো গোল পৃথিবী মুখের কাছে ধ’রে
ভেতরের হাড় মাটি কয়লা তেল লোহা
ফেলে দিয়ে, ফাঁকা ওই করোটিতে আমি রাত্রিভোর
সশব্দ খাঁকারে রক্ত, দমকে দমকে রক্ত, ফেলি
তলায় আকাশ বয়ে যায়
হৃদপিণ্ড–এক ঢিবি মাটি – জয় গোস্বামী
হৃদপিণ্ড–এক ঢিবি মাটি
তার উপরে আছে খেলবার
হাড়। পাশা। হাড়।
হৃদপিণ্ড, মাটি এক ঢিবি
তার উপরে শাবল কোদাল চালাবার
অধিকার, নিবি?
চাবড়ায় চাবড়ায় উঠে আসা
মাটি মাংস মাটি মাংস মাটি–
পাশা। হাড়। পাশা।
দূরে ক্ষতবিক্ষত পৃথিবী
জলে ভেসে রয়েছে এখনো–
তাকে একমুঠো, একমাটি
হৃদপিণ্ড, দিবি?
হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে – জয় গোস্বামী
অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
করো আনন্দ আয়োজন করে পড়ো
লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে
যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করো
করেছো, অতল; করেছিলে; পড়ে হাত থেকে লিপিখানি
ভেসে যাচ্ছিল–ভেসে তো যেতই, মনে না করিয়ে দিলে;
–’পড়ে রইল যে!’ পড়েই থাকত–সে-লেখা তুলবে বলে
কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে।।
হে অশ্ব, তোমার মুণ্ড – জয় গোস্বামী
হে অশ্ব, তোমার মুণ্ড
টেবিলে স্থাপিত। রাত্রিবেলা
হাঁ করা মুখ থেকে
ধোঁয়া ঝরে
আর সে-ধোঁয়ার মধ্যে চতুষ্পদ কবন্ধ তোমার
সারারাট ছুটোছুটি করে!
আরও পড়ুন: